আনহেল ডি মারিয়ার বিদায়ী ম্যাচ। জয়টা তাকেই উৎসর্গ করতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বাধ সাধে কলম্বিয়া। শরীরী ফুটবলে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের দমিয়ে রাখে তারা। তাদের শরীরী ফুটবলের শিকার হয়ে ৬৩ মিনিটে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় লিওনেল মেসিকে। মাঠ ছাড়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। চোখে মুখে হতাশা। যেন শেষ বেলায় সব হারাতে হচ্ছে তাকে। তখনও যে গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। এ সময় গ্যালারিতে আসা আর্জেন্টাইন সমর্থকরা দাঁড়িয়ে মেসিকে সম্মান জানিয়েছেন।
মেসির এই চোখের জল বৃথা যেতে দেয় কি করে আর্জেন্টিনা। মাঝে এক দফা অফসাইডে গোল বাতিল হলেও বৃথা যেতে দেয়নি লাওতারো মার্তিনেজ। আসরে দারুণ ফুটবল খেলা মার্তিনেজ এদিন মাঠে নামলেন অতিরিক্ত সময়ের ৯৭ মিনিটে। এসেই যেন বদলে দিলেন দলের চেহারা। দারুণ এক গোল করে উৎসবের আমেজ তৈরি করলেন গ্যালারিতে। যেন প্রাণ ফিরে পেল আর্জেন্টিনার ডাগআউগ। শেষ পর্যন্ত ১১২ মিনিটে মার্তিনেজের সেই গোলটিই গড়ে দিলো আর্জেন্টিনার জয়। ১-০ গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় ও রেকর্ড ১৬তম কোপা আমেরিকা শিরোপা ঘরে তুলল আলবিসেলেস্তেরা। রাঙানো হলো ডি মারিয়ার বিদায়টাও।
অথচ, এদিন নির্ধারিত সময়েই জয়টা পেত পরত আর্জেন্টিনা। যেতে হতো না অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে এসে উদযাপনের উপলক্ষ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। নিকোলাস গঞ্জালেস ভেঙেছিলেন ডেডলক। তবে সেই উদযাপন শেষ হওয়ার আগেই সাইড রেফারি পতাকা তুলে জানিয়ে দেয় গোল হওয়ার আগেই অফসাইডে ছিলেন তালিয়াফিকো। ভিএআর চেক করেও দেখা গেছে একই দৃশ্য। বাতিল হয় আর্জেন্টিনার গোল। হতাশ হতে হয় সমর্থকদের। মেসির চোখের জল ঝরছে তখনও। এরপর বাকি সময় চেষ্টা চালিয়েও আর গোল পায়নি কোনো দল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতা থাকায়; ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
সেখানেও লড়াইটা চলে বেশ। দু’দলই পাল্লা দিয়ে লড়ছিল একটি গোলের জন্য। অবশেষে সেই গোলটা পেল আর্জেন্টিনাই। লো সেলসোর বাড়ানো বল দারুণ দক্ষতায় নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জাল কাঁপান মার্তিনেজ। সেই সঙ্গে কেঁপে উঠে মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়াম। উদযাপনের যেন বাঁধ ভেঙেছে গ্যালারিতে। মেসির মুখে অবশেষে ফুটল হাসি। হাফ ছেড়ে বাঁচলেন কোচ লিওনেল স্কালোনিও। অন্যদিকে ২৩ বছর পর কোপার ফাইনালে পা রাখা কলম্বিয়ার ডাগআউটে তখন বইয়ে শোকের মাতম। লড়াইয়ের সময় যে ফুরিয়ে আসল বলে। ব্যবধান ঘোচানো ওই সময়ে বড্ড কঠিন হতো কলম্বিয়ার। হয়েছেও তাই, শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের হারেই কোপা শেষ করতে হয়েছে কলম্বিয়াকে।
এদিন কোপা আমেরিকার ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ২৩ বছর পর ফাইনালে পা রাখা কলম্বিয়া লড়াই দেখতে মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়াম এলাকা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। ম্যাচের আগেই স্টেডিয়াম এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। টিকিট না কেটেই ম্যাচ দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সমর্থকরা। নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে মাঠে ঢুকার চেষ্টা করে সমর্থকরা। যার ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে ম্যাচ শুরু করতে হয় নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর। তবে সেই ম্যাচের প্রথমার্ধটা আর্জেন্টিনার কাটে হতাশায়। দু’দলের কেউই প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি।
প্রথমার্ধে ছন্নছাড়া ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে খানিকটা গুছিয়ে উঠে আর্জেন্টিনা। বেশ কয়েক দফা গোলের সুযোগও তৈরি করে দলটি। তবে গোলের দেখা পাচ্ছিল না কোনোবারই। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে দলগত প্রচেষ্টায় গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার আক্রমণ রুখে দেওয়ার সময় বল বাধা দেওয়ায় পেনাল্টির আবেদনও জানিয়েছিল আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। তবে তাদের সেই আবেদন আমলে না নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে বলেন রেফারি।
এরপর ৬৩ মিনিটে এসে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। তবে তাতে দমে যায়নি আর্জেন্টিনা। বরং মেসির মাঠ ছাড়াকে শক্তিতে পরিণত করে গোল আদায় করে নেয় আর্জেন্টিনা। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই গোলটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। এরপর ৭৯ মিনিটে গঞ্জালেস আরও এক দফা গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে এ দফায় বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পারলেও কলম্বিয়ার রক্ষণকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস বক্সের ভেতর হেডে জালে জড়ানোর সুযোগ ছিল গঞ্জালেসের সামনে। এ দফায়ও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তার নেওয়া সেই হেড থাকেনি গোলপোস্টে। আরও একবার হতাশ হতে হয় আর্জেন্টিনাকে। যদিও পরে অরিরিক্ত সময়ে মাঠে নেমে দলের সব হতাশা ভুলিয়ে দিয়েছেন মার্তিনেজ। আরও একটা শিরোপা এনে দিয়েছেন আর্জেন্টাইনদের।