The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪

কোটা আন্দোলন নিয়ে কি বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা

মেহরাব হোসেন, ববি প্রতিনিধিঃ ২০১৮ সালের মতো দেশে আবারও সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলন ছাড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা দাবি করছে যে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা (পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কয়েক বছর ধরে সে অনুযায়ী কোটাবিহীন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি রিটের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে যা প্রতিক্রিয়ায় এখন আন্দোলন আবার শুরু হয়েছে।

সরকারী চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একমত পোষণ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকরা তারা তাদের মতামত প্রদান করেছেন। সেগুলো তুলে ধরা হলো।

মুক্তিযোদ্ধার নাতির প্রতি—

মেধা ও শ্রম দিয়ে যুদ্ধ করে প্রমাণ করো তুমি এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি। তোমার বাবা তো যুদ্ধ করেনি,
যুদ্ধ করেছেন তোমার বাবার বাবা। তাহলে তুমি কোন যুক্তিতে কোটা পাবে? মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে পর্যন্ত কোটা মানা যায়। ওয়ারিশও তো বাবারটা ছেলেমেয়েরা পায়, দাদার কাছ থেকে নাতিরা পায় না।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার যত শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা ঠিক তত শতাংশ কোটা পাওয়া উচিত শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের।
প্রকৃতপক্ষে কোটা থাকা উচিত শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য।

নুরুল ইসলাম মুজিব, সহকারী অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কোটা পদ্ধতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখানোর একমাত্র কিংবা উপযুক্ত পথ নয়। বরং যে উদ্দেশ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করলে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া চিন্তার স্বাধীনতা অর্থহীন। এভাবেই আমার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত চিন্তার উর্বর ভূমি হবে!

তবে কোটা নিয়ে আমার চিন্তা অসীমের অভিমুখে ধাবমান।। এই বঙ্গ দেশে আরো কি কি এবং কোথায় কোথায় কোটা অন্তর্ভুক্ত করা যায়!!! কোটাময় হয়ে উঠুক প্রিয় স্বদেশ।

পাব্লিক ইম্পর্টেন্স বলে যে শব্দদ্বয় আমরা আইনের বইয়ে পড়ি এগুলো রহিত করা উচিত; তাও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে।

মাঝে মাঝে মনে হয় আমার অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে গেল। শুধুই প্রেক্ষকের ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছে করে

প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিল এবং কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

সাজ্জাদুল কারিম, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আল্লাহর রহমতে যথেষ্ট প্রিভিলেজড। আমি কখনোই আমার সন্তানকে পোষ্য কোটার সুবিধা নিতে দিবনা। যে ছেলে/মেয়েটি দারিদ্রতা ও নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসে তাকে বঞ্চিত করে আমার সন্তানের মতো প্রিভিলেজড কেউ কোটা সুবিধা ভোগ করলে তা হবে ভয়ানক অনৈতিক এবং অমানবিক।

সাদিক হাসান শুভ, সহকারী অধ্যাপক স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই রাজপথে। উভয়েরই আজ অস্তিত্ব সংকট।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বিপ্লব ঘটবে, এটা অবশ্যম্ভাবী।

আমরা চাই আমাদের প্রাপ্য অধিকার, নিরাপদ ভবিষ্যত; আর শিক্ষার্থীরা চায় অবাধ কোটা সুবিধার পরিবর্তে সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখতে।
নিজেকে প্রমাণ করার অধিকার চাওয়া নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়!

আমরা চাই শ্রেনিকক্ষে ফিরতে। আমাদের শিক্ষার্থীরা চায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে। আমাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হোক।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন আশা করি দ্রুত বিষয়টি অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শাহানাজ পারভিন রিমি, সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.