চবি প্রতিনিধি : অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে ২৫,২৬,২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্নদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। তাদের তিনটি দাবি হলো : ১. অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ২. প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং ৩. শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন।
এদিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আল্টিমেটাম ছিল যদি ৩০ জুনের মাঝে তাদের দাবি মানা না হয় তাহলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন। এর ফলে আজ সোমবার
(১লা জুলাই) থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এসময় ক্লাস, পরীক্ষা, দাফতরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এ কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। শিক্ষক সমিতির পাশাপাশি অফিসার্স সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নও কর্মবিরতি পালন করছে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের আহ্বানে ১, ২ ও ৩ জুলাই পূর্নদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন চবি অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ।
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যেই পেনশন স্কিম প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে এটি প্রত্যাহার করা হোক। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ জুন আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ অবস্থানে থাকবো।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো.আখতারুল ইসলাম জানান, তাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। এদিকে কর্মবিরতিতে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চবির প্রথম বর্ষের উদ্বোধনী ক্লাসও আটকে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল রোববার (৩০শে জুলাই)। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান কর্মবিরতির ফলে চবির কোনো বিভাগেই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করা যায়নি।
এদিকে উদ্বোধনী ক্লাস না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের। ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়া আরাফাত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলাম। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই অপেক্ষা করছিলাম, কখন ক্লাস শুরু হবে। ক্লাস করার জন্য বাড়ি থেকে চলেও এসেছি। কিন্তু ৩০ জুন আমাদের ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে আমাদের ক্লাস আটকে গেছে। আসলে কবে শুরু হবে সে বিষয়ও জানি না। এ অবস্থায় আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।
এছাড়া শিক্ষক, কর্মচারীদের চলমান এই কর্মবিরতিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের। কেউ কেউ লিখছেন শিক্ষকদের পেনশনের টাকার জন্য শিক্ষার্থীরা কেন ভুক্তভোগী হবে ?
আবার কেউ কেউ লিখছেন, তাঁহারা যদি প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়েও এভাবে সোচ্চার হতেন, তাহলে মেধাবী স্টুডেন্টরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতো, পান খেতে খেতে লাঞ্চের পর আসেন বলা আত্মীয় স্বজনদের সংখ্যাও শূন্য হয়ে যেতো। আবার কেউ কেউ হতাশা ব্যক্ত করে সেশনজটের শঙ্কা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী সেশনজটের শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনার কারণে আমরা দুই বছর পিছিয়ে গিয়েছি। এমনিতেই শিক্ষকরা তাদের সময় মতো ক্লাস নেয়। পরীক্ষার আগে আগে কোনো রকমে ক্লাস শেষ করে দেয়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের পড়াশোনা হওয়ার কথা তা তো দূরে থাক শিট নোট পড়েই পরীক্ষা দিতে হয়। আর এখন তো উনারা সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের জন্য কর্মবিরতিতে আছেন। জানি না এটা কখন শেষ হবে। এভাবে চললে সেশনজটে আটকে থাকতে হবে।