জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক ছাত্রীকে ‘ধর্ষণচেষ্টা’, ছিনতাই এবং এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগে বহিরাগত দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এদিকে এ ঘটনা জানার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কেউ আসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টার দিকে বহিরাগত দু’জনকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত পালিয়ে গেছেন। এরপর রাত দুইটার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
আটককৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ক্যাফেটেরিয়ার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাজমুল হাসান (৩২) এবং দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে কর্মরত মো. আল-আমিন (২৮)। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তির নামও আল-আমিন বলে জানা গেছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধিত) ২০০৩’-এ মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রী। তাদের মধ্যে আটক দু’জনকে গতকাল বুধবার কোর্টে পাঠানো হয়েছে। আরেকজন পলাতক রয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগপত্র সুত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মার্কেটিং বিভাগের ৫০তম ব্যাচের এক ছাত্রী ও তার ছেলে বন্ধু অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশ দিয়ে মনপুরা এলাকায় যাচ্ছিলেন। এসময় বহিরাগত তিনজন তাদের পথরোধ করে। তারা সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ও তাদের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ওই নারী শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাবও দেয়। প্রায় তিনঘন্টা পর রুহুল আমিন এক লাখ টাকা আনার কথা বলে সুকৌশলে বন্ধুদের ফোন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বেধড়ক মারধর করেন। অভিযুক্তদের একজন পালিয়ে গেলেও বাকি দু’জনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যান। পরে ওই দু’জনকে আশুলিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করে নিরাপত্তা শাখা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল বলেন, ‘ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর মহোদয়কে অবহিত করেছি। পরে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে আটককৃতদের পুলিশে সোপর্দ করেছি।’
অন্যদিকে এই ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় চার ঘন্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরদের মধ্যে কেউ আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এর আগেও একাধিক ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা শাখার এক কর্মকর্তা।
ওই ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত না থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের জানাযা শেষ করে আসতে রাত আটটা পেরিয়ে যায়। তবে সহকারী প্রক্টররা কেউ উপস্থিত ছিল না কেনো- সে ব্যাপারটি দেখবো।’
অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। যদিও মঙ্গলবার রাতেই আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রী। যেহেতু অভিযুক্তরা বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এ সংক্রান্ত ঘটনায় রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নিতে হয়।’