একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হিমশিম খেতে হয় সেখানে একাই পেলেন ১২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। চলতি জুন মাসে সদ্য কলেজের গন্ডি পার করা এক তরুণের এমনই একটি ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছে। ঘটনা আমেরিকার।
হেল্মস আটেগেকা, কোভিডের আগে আগে উগান্ডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা তাঁর বাবার কাছে। ছেলের ৩.৯৪ জিপিএর কারণে তাঁর বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন এবং চাচ্ছিলেন ছেলে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ডাক্তারি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হোক। কিন্তু ছেলের ঝোঁক ছিল সংগীতের দিকে। মেধাবী ছেলে তাঁর বাবার ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাননি, বাবাও চাননি ছেলের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এমনটি জানা গেছে।
বাবার ইচ্ছা ছেলে চিকিৎসক কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হোক, ছেলের ইচ্ছা সংগীতে পড়াশোনা করার এবং বড় পপ স্টার হওয়ার। অগত্যা বাবাকে রাজি করাতে এবং নিজের মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে ৩.৯৪ জিপিএ নিয়ে নেমে পড়েন ভর্তিযুদ্ধের মাঠে। কয়েক মাস নিজে অনলাইনে খোঁজখবর করে একে একে আবেদন করেন ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীতের ওপর খুব ভালো পড়াশোনার সুযোগ আছে, সেগুলোকেই তিনি বেছে নেন আবেদনের জন্য।
আবেদন করতে যেখানে যেখানে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে, সেগুলোর টাকা নিলেন বাবার কাছ থেকে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের স্নাতক বাবা ক্রিস্টোফার আটেগেকা ছেলেকে সব সহযোগিতা করলেন। বাবার বিশ্বাস ছিল, ছেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
কয়েক মাসের পরিশ্রম আর খরচের ফলও মিলল হাতেনাতে। একে একে ডাকযোগে আসতে থাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার। মোট ১২২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পান হেল্মস। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং নিশ্চিত করেছি যে তারা আমার আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি এতটা আশা করিনি যে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হ্যাঁ বলে দেবে। এর জন্য আমার কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।’
এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর আবার শুরু হয় হেল্মসের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তা নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগীতবিষয়ক ভিডিও, কনসার্টের আয়োজনের তথ্য ইত্যাদি দেখে তাঁর মনে হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলেতে একধরনের জীবন আছে, আনন্দ আছে। অবশেষে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যেখান থেকে তাঁর বাসাও খুব কাছাকাছি হবে। উপরি তাঁর বাবাও এই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক স্নাতক।
ছেলে হেল্মসের ১২২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়ার ব্যাপারে বাবা ক্রিস্টোফার বলেন, ‘একজন অভিবাসী বাবা হিসেবে আমি প্রায়ই ভাবতাম সে যেনো ভালোভাবে জীবনযাপনের খরচ চালাতে পারে। সে আমার কথাকেই আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। আমি সব সময় তাঁকে বলতাম, তুমি যা–ই হতে চাও হতে পারবে, যদি তুমি সেটাকে তোমার ধ্যানজ্ঞান বানিয়ে নিতে পারো। সে দেখিয়ে দিল, সে কী হতে চায়।’