ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তকে ‘হোল্ড অন’ বলে তোপের মুখে পড়া এলাচ ব্যবসায়ী অমর কান্তি দাশ আবারও জালিয়াতি করে ধরা পড়েছেন। এবার প্রতি কেজি এলাচে অন্তত তিন হাজার টাকা লাভ করতে গিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন তিনি।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে হঠাৎ গরম মশলার বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় বুধবার (৫ জুন) দুপুরে নগরীর খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় ১ হাজার ৪৪০ টাকায় কেনা এলাচ ৪ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন মেসার্স বিআর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী অমর কান্তি দাশ। এজন্য এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ অভিযান চালিয়ে এ জরিমান করেছেন।
মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দেশের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের এলাচ আমদানিকারক মেসার্স বিআর ট্রেডিংয়ের অনিয়ম ও জালিয়াতির চিত্র আবারও ধরা পড়েছে। কেজিতে অন্তত তিন হাজার টাকা লাভে এলাচ বিক্রি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক। আমদানির নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চ মাসে এলাচ আমদানি করেছিল। প্রতি কেজি আমদানি করতে শুল্ক, আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচসহ দাম পড়েছে এক হাজার ৪৪০ টাকা। কৃষি বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ লাভ করলে দাম ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। অথচ ওই এলাচ চার হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।’
সপ্তাহখানেক আগেও একই এলাচ প্রতি কেজি এক হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল জানিয়ে অধিদফতরের উপপরিচালক বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দাম বাড়তে বাড়তে সেটি বুধবার চার হাজার ৪৫০ টাকায় পৌঁছেছে। হঠাৎ মশলার বাজারে অস্থিরতার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই। দেখা গেছে, আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের একটি চক্র বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে প্রতি কেজিতে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছে। এজন্য মেসার্স বিআর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রকার অনুযায়ী কেজি এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করবেন।’
অবশ্য এর আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই আমদানিকারক। সেটি রাখেননি। গত ১০ মার্চ দুপুরে খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। তখন এক হাজার ৪৫০ টাকার এলাচ তিন হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন অমর কান্তি। অভিযানের সময় ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যবসায়ীর কাছে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখতে চান। তখন অমর কান্তি বলেন, ‘এক মিনিট হোল্ড অন’। ব্যবসায়ীর এই বক্তব্য যে পছন্দ হয়নি বোঝা গেলো প্রতীক দত্তের কথায়। ম্যাজিস্ট্রেট আবারও জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি বললেন?’ দোকানি তখন উত্তর দেন, ‘আমি একটু হোল্ড করতে বলতেছি’। এমন কথায় মেজাজ বিগড়ে যায় ম্যাজিস্ট্রেটের। পুনরায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চান, ‘আপনি কি বললেন এই কথা’। তখন দোকানি আবারও বলেন, ‘আমি আপনাকে হোল্ড করতে বলতেছি’।
এ সময় দাঁড়িয়ে গিয়ে প্রতীক দত্ত বলেন, ‘আমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে এসেছি। আপনি আমাকে বললেন হোল্ড অন’। ব্যবসায়ীও তখন কিছুটা চড়া গলায় বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করার জন্য বলবো না’। ওই ব্যবসায়ীর উদ্দেশে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনি বলবেন আপনি একটু অপেক্ষা করেন। অনুরোধ করবেন।’
তাদের এই তর্কবিতর্কের একটি ভিডিও ফুটেজ ওই দিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ফেসবুকে নানামুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন।