পরিবেশ দিবসে বিপর্যয়ের পথে জাবির পরিবেশ, নিশ্চুপ পরিবেশবাদীরা
জাবি প্রতিনিধি: ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের সূচনা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে প্রায় তিন হাজার গাছ এবং ভরাট করা হয়েছে কয়েকটি লেক। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য। এগুলা দেখেও নিশ্চুপ থাকার অভিযোগ রয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ‘মেইন বার্ডস’ খ্যাত লেকের পাড়ে প্রায় চার শতাধিক গাছ কেটে চারুকলা অনুষদ ভবন এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ কাজ শুরুতে এ বিষয়টি চোখে পড়ে। তাদের এই চুপ থাকাকে অংশীজনরা দুঃখজনক বলে অভিহিত করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব পরিবেশবাদী সংগঠনের সক্রিয় কমিটি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি আর্থ সোসাইটি এবং নেচার কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ (এনসিআই)। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অন্যতম কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা। বন্যপ্রাণী এবং তাদের আশ্রয়স্থল রক্ষা করা। পরিবেশ কেন্দ্রিক সকল বিষয় নিয়ে তাদের সচেতন ও সতর্ক থাকা এবং সকলকে সচেতন করা।
মাস্টারপ্ল্যানবিহীন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যে নেমে আসে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা। তবে সেখানে ছিল না পরিবেশবাদী সংগঠনের কোনো ধরনের কর্মসূচি এবং ছিল না পরিবেশ রক্ষায় তাদের কোনো লিখিত বিবৃতি। মূলত সংগঠনগুলোর উপদেষ্টার দায়িত্বে শিক্ষকরা থাকায় বিবৃতি দিতে কখনো কখনো হস্তক্ষেপ করেন আবার কখনো কখনো সাড়া দেন না তারা।
এ অভিযোগের বিষয়ে জেইউ আর্থ সোসাইটির সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিমুল আহমেদ বাপ্পি বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমরা সশরীরে কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। তবে অনলাইনে আমরা এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছি। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি এটা সত্য। তবে আমরা দ্রুতই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকলকে আহবান জানিয়ে বিবৃতি দিব। আমরা একটি আর্টিকেল পাবলিশ করব যেখানে অপরিকল্পিত গাছপালা কেটে ফেলার কারণে পরিবেশে কি কি ক্ষতি হবে সেটা তুলে ধরবো। আজকালের মধ্যে একটা বিবৃতি দিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন আর্থ সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, পরিবেশে নিয়ে সচেতনতা তৈরি করাই আমাদের সংগঠনের কাজ। সংগঠন পরিচালনা করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা চাইলে চলমান যে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারে, আমি তো উপদেষ্টা তারা আমার কাছে আসলে আমি শুধু পরামর্শ দিতে পারি। এবিষয় নিয়ে আমার কাছে কেউ আসে নি।
এনসিআই এর সভাপতি এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহীয়া সোলায়মান মাহী বলেন, আমাদের সংগঠন মূলত পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করে। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা এবিষয়ে কিছু করতে পারি নি আর সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাজ গুলো একটু ধীর গতিতে হচ্ছে। সদস্যরা বাড়ি চলে যাওয়ায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে চলমান পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়ে উঠে নি। তবে আমাদের চিন্তা ভাবনা আছে বিবৃতির বিষয়ে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন এনসিআই’র প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম থেকেই আমরা উপাচার্যকে অনেকবার বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জায়গাকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনোই আমাদের কথা শোনেনি। আমরা অনেক লিখিত বিবৃতি দিয়েছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা কর্ণপাত করেনি। তবে আমরা শুধু প্রতিবাদ করতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত নিবে তা তো আমরা প্রতিরোধ করতে পারি না।
সম্প্রতি ‘মেইন বার্ডস’ লেকের পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটার প্রতিবাদে কোনো বিবৃতি দিয়েছেন কিনা এ প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দিতে পারেন না। অনেক আগে আমরা বিবৃতি দিয়েছিলাম বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, প্রকৃতি সংরক্ষণ উদ্যোগে- নেচার কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ ২০১৩ সালে এবং জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি আর্থ সোসাইটি ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় কমিটি দিয়ে কাজ শুরু করে।