সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার করা না হলে ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে’ যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে মঙ্গলবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা, ‘সুপার গ্রেডে’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল কার্যকরের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, “গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে শিক্ষকরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা প্রতীকী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে।
“বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকদের সঙ্গে দায়িত্বশীল কোনো পক্ষ যোগাযোগও করেননি।”
শিক্ষকদের সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে।
সর্বাত্মক কর্মসূচি ব্যাখ্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, “পহেলা জুলাই থেকে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হবে না। চেয়ারম্যানরা সকল বিভাগ বন্ধ করে দেবেন। কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। হলের হাউজ টিউটররা আর কোনো হলে যাবেন না। কোনো ইনস্টিটিউটের পরিচালক আর ইনিস্টিটিউটে যাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গবেষণা, ওয়ার্কশপ তারা করবেন না। নতুন কোনো কর্মসূচি শিক্ষকরা গ্রহণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিও বন্ধ থাকবে। কারণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালকও একজন শিক্ষক।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গবেষণাগার বন্ধ হয়ে যাবে পহেলা জুলাই থেকে। পহেলা জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। এটাই সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপরেখা।”
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বিষয়টি নিয়ে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব বলেছিলেন, “এই স্কিমের ফলে ১ জুলাইয়ের আগে ও পরে চাকরিতে যোগদান করা ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষ্যম্য তৈরি হবে। যেটা সংবিধানের সমতার পরিপন্থি। প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে, যেটা আগে করা হত না। এ স্কিমে আনুতোষিক শুন্য।
“বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন, কিন্তু নতুন এই স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশনপ্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় প্রাপ্ত ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেতেন, সবর্জনীন পেনশন ব্যবস্থায় সেটা সুস্পষ্ট করা হয়নি।”
আন্দোলনের বিষয়ে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, “এটি শিক্ষকদের একক স্বার্থ নয়। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মতের শিক্ষকরা এই আন্দোলনের পেছনে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন।
“এটি কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়; বরং একপক্ষ শিক্ষকদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে।”