ভাঙা বাড়ি, চারদিকে স্পষ্ট দারিদ্র্যের ছাপ। বাবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভাঙা বাড়ি আর ভাঙা চেয়ারে বসেই বাজিমাত করেছেন হালিমা হালিমা আক্তার। শত প্রতিকূলতাকে পাশকাটিয়ে মাধ্যমিকে পেয়েছেন সর্বোচ্চ সাফল্য জিপিএ ৫।
পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার নলী চড়কগাছিয়া তমিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করা হালিমার টাকার অভাবে নিয়মিত প্রাইভেট পড়া হয়নি। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতেন। শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা করেও এত কষ্টের সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ভয় ছিল। তবে সব আশঙ্কা কাটিয়ে পেয়েছেন সাফল্য।
হালিমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ডাক্তার হয়ে বিনামূল্যে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। টাকার অভাবে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব না মনে হচ্ছে। গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা প্রতিবন্ধী। আশপাশে মানুষ ও শিক্ষক লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে।
এছাড়া সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে, এই চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।
হালিমার বাবা নাসির হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মেয়ে জিপি-৫ পেয়েছে, আমরা অত্যন্ত খুশি। স্কুলের স্যারদের এবং আশপাশের মানুষের সহযোগিতায় মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি কারণ আমি প্রতিবন্ধী মানুষ কাজ করতে পারি না। আমার চার মেয়েকে কষ্ট করে পড়িয়েছি। আমার থাকার ঘর নেই। আমি রান্না ঘরে বসবাস করি। আমার একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিলে মেয়ে এখানে বসে লেখাপড়া করতে পারবে।
প্রতিবেশী কামরুল গণমাধ্যমকে জানান, হালিমা মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন ভালো কলেজে ভর্তি করতে ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা জোগাড় করা তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তার বাবা অন্ধ, অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে জীবনযাপন করেন। আমরা চাই, মেয়েটির পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটি পেশায় যেন যুক্ত হতে পারে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের গণমাধ্যমকে জানান, বিভিন্ন সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে মাঝে মাঝে তথ্য চাওয়া হয়, আমরা সেখানে তার তথ্য পাঠাব। তাছাড়া জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের এখানেও সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করব।