চবি প্রতিনিধি: ‘এই বৈশাখে বৈশ্বিক বৈভবে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখ’ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রোববার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষকে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গ্রাম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে দিনব্যাপি এ বর্ষবরণ উৎসবে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় উদযাপন কমিটির আহবায়ক চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের। কেন্দ্রীয় উদযাপন কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী।
দিনব্যাপী কর্মসূচি: বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জারুলতলায় এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ১১ টায় জারুলতলায় বৈশাখী মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংগীত, বৈশাখের গান ও নৃত্য অনুষ্ঠান। অতঃপর বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদ্বয় ‘শুভ নববর্ষ ১৪৩১’ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল হক বলেন, নববর্ষের একটাই ভাব সেটা হচ্ছে সার্বজনীনতা। একটি জাতি শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে যত বেশি উন্নত সেই জাতি তত বেশি এগিয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি প্রকৃতার্থেই প্রগতিশীল করতে হয় তাহলে এই সাংস্কৃতিক ধারা বজায় রাখতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, গতবছরের সকল অন্যায় অবিচারকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে আবার নতুন করে শুরু করবো। যাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে তাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টিপাত রাখার জন্য অনুরোধ করছি মাননীয় উপাচার্যকে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, আজকের এই বাংলা নববর্ষ যাদের জন্যে পেয়েছি তাদেরকে প্রাণভরে স্মরণ করছি। পুরাতনের গ্লানি মুছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের স্যারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো আমরা।
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো। যে যাই বলুক না কেন, এই নববর্ষকে নিয়ে যতোই ব্যাঙ্গাত্মক করুক না কেন আমরা আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের কাছে এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিয়ে যাবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো
আবু তাহের বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নববর্ষ উৎসবের সূচনা করেন সাবেক উপাচার্য আবু ইউসুফ স্যার। তিনদিন ব্যাপী সেই আয়োজন চলতে থাকে। অনেকেই আমাকে বলেছিলেন ঈদের পর পরেই এই উৎসব কিভাবে পালন করবেন? আমি তাদের বলেছিলাম যদি ঈদের দিনেও নববর্ষ হতো তাহলেও আমরা এই উৎসব পালন করতে দ্বিধাবোধ করতাম না। আমি কথায় বিশ্বাসী না কর্মে বিশ্বাস করি। বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আপন গতিতে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যাবো।
আলোচনা শেষে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০ পর্যন্ত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা (মুক্ত মঞ্চে), কাবাডি খেলা (বুদ্ধিজীবী চত্বরে) এবং বউচি খেলা (চাকসু প্রাঙ্গনে) অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলী হোসাইন, কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুমন মামুন, অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তন্ময়ী হাসান অয়ন।