জাবি প্রতিনিধি : বাক-বিতণ্ডার জেরে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী আলহামরা পরিবহনের একটি বাস আটকিয়ে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। আর বাস আটকের সময় জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তিনি বিষয়টির সমাধান দিতে পারেননি।
সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- সহসভাপতি মাজেদুল ইসলাম সজীব, মাহমুদ আল গাজ্জালী, মো. হাসান মাহমুদ ফরিদ ও উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক নাহিদ ফয়সাল। এদের মধ্যে মো. হাসান মাহমুদ ফরিদ ছাড়া বাকি সবাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের নেতা।
বাস আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবির ইংরেজি বিভাগের ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ৪৯ ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. সজীব মন্ডল বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় আমি ঈদের ছুটিতে গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য নবীননগরে আলহামরা পরিবহনে টিকিট কাটতে যাই। সেসময়, কাউন্টারের লোককে আগামী ৩ এপ্রিলের টিকিটের দাম জনাতে চাইলে ২ হাজার টাকা বলে জানান। কিন্তু ওই পরিবহনের গাড়ি প্রতি সিট ৮০০, এক হাজার এবং ১২শ টাকা দামে ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে নিয়মিত চলাচল করে। এসময়, আমি মুঠোফোনে ভিডিও চালু করে তাদের কাছে ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলে কাউন্টার মাস্টার ভিডিও বন্ধ করতে বলেন এবং আমাকে ভেতরে গিয়ে সব দেখতে বলেন। একপর্যায়ে আমি ভিডিও বন্ধ না করতে চাইলে আমার হাত ধরে টানাটানি করা শুরু করেন। এতে আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে যা মারধর করার চেয়ে বেশি। পরে আমি সেখান থেকে বের হয়ে হলের বন্ধুদের বিষয়টি জানালে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আরিচাগামী আলহামরা পরিবহনে একটি বাস আটক করে। এতে বাস কর্তৃপক্ষ থেকে কোন টাকা আদায় করা হয়েছে কিনা আমি জানি না।
আলহামরা পরিবহনের নবীনগর কাউন্টারের একজন টিকিট বিক্রেতা জানান, ওইদিন জাবি থেকে একজন শিক্ষার্থী গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে আসেন। টিকিটের দাম স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার টাকা থাকলেও ঈদে কোম্পানির পক্ষ থেকে তা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়। বেশি ভাড়ার কথা শুনে ওই শিক্ষার্থী টিকিটের দাম কমাতে বলে। তখন আমি তাকে দাম কমানো যাবে না বলে জানাই। বলি, ‘কোম্পানি থেকে এটা করে দেয়া। আপনি আমার ওয়েবসাইট দেখেন। আমার দাম কমানোর সাধ্য নেই। আপনি যদি ঢাকায় কথা বলে ফ্রি করে নিতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই। কোম্পানি যে রেট দেয় আমাকে ওই রেটে বিক্রি করতে হয়।’ এসময়, ওই শিক্ষার্থীকে কোনরকম মারধর বা হেনস্তা করা হয়নি। শুধু টিকিটের দাম কমানো নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
সাভার কাউন্টারের কর্মকর্তা মামুন বলেন, ‘আমাদের নবীনগর কাউন্টারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সাথে টিকিটের দাম দিয়ে তর্কাতর্কি হয়। পরে সে সেখান থেকে চলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের ওখানে বাস আটকায়। সন্ধ্যায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে আমার থেকে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়, না হলে বাসে আগুন দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে ৩৫ হাজার টাকায় সমাধান হয়। আমি টাকা পকেট থেকে বের করার পরই তা নিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা নাহিদ।’
ওই নেতাকে আগে থেকে চিনতেন কিনা জানতে চাইল মামুন আরো বলেন, ‘শুরু থেকেই তিনি আমাদের সাথে কথা বলেছেন, টাকা দাবি করেছেন। তখন তার নাম শুনেছি। যে হলের ছাত্রের সাথে ঝামেলা হইছে তিনিও ওই হলের ছাত্র।’
যদিও ছাত্রলীগের উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক নাহিদ ফয়সাল টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইফতারের পর সোহেল ভাইসহ আমরা ডেইরি গেটে চা খাচ্ছিলাম। তখন একজন বাস আটকানো সম্পর্কে জানালে সোহেল ভাই আমার সিনিয়রদের বাস ছাড়ার বিষয়টি বললে তারা বাস ছেড়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
তবে ছাত্রলীগের একটি অংশ জানিয়েছে, জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাজেদুল ইসলাম সজীব, মাহমুদ আল গাজ্জালী, মো. হাসান মাহমুদ ফরিদ ও উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক নাহিদ ফয়সালকে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলতে দেখেছেন তারা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আর রাফি চৌধুরীর নির্দেশে মালিকপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। টাকা নেয়ার ঘটনা ঘটলে তারাই সেটি নিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার সময় ডেইরি গেটে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল উপস্থিত থাকার পরও বিষয়টির কোন সমাধান দিতে পারেননি বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, বাসের মালিক পক্ষ প্রথমে সভাপতির কাছে আসলে তিনি ঘটনার কোন সুরাহা করতে পারবেন না বলে জানান এবং যারা বাস আটক করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর টাকার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন সাংবাদিক। তিনিও বিষয়টি সমাধানে ছাত্রলীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বলে জানান। কিন্তু এরমধ্যেই শুনতে পান, ছাত্রলীগ নেতারা টাকা নিয়ে বাস ছেড়ে দিয়েছেন।
এবিষয়ে আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, বাস আটকের বিষয়টি শুনেছি। চাঁদা আদায়ের ঘটনা কীভাবে ঘটল তা জানি না। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বাক বিতন্ডার জেরে বাস আটকের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টির প্রতিবাদ করা অবশ্যই যৌক্তিক। সেক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে ডেকে ভাড়া কমানোর জন্য আলোচনার মাধ্যমে চাপ দেয়া যেত। কিন্তু তা না করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বাস আটকে টাকা নিয়ে উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ভাড়া কমবে না, উল্টো এর খেসারত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা।