মেহরাব হোসেন, ববি প্রতিনিধিঃ
পলাশ ফুলের শোভা দেখে কেমন জানি করে মন
অনেক পলাশ মিলে আজ করছে শান্তিনিকেতন,
অনেক দূরে নিকেতনে পলাশ তুমি থেকো ভালো
আজকের এই বিশেষ দিনে ছড়াবে রংয়ের আলো।
শীতের মলিনতা ও রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরিয়ে এনেছে ঋতুরাজ বসন্ত। বৃক্ষরাজি ভরে গিয়েছে রঙিন ফুলের ছোঁয়ায়। ফুলের প্রতি দুর্বলতা মানুষের স্বভাবজাত এক বৈশিষ্ট্য। আর ফুলটি যদি হয় পলাশ তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই!
কবি কিংবা গীতিকাররা পলাশের বর্ণনা নানানভাবে দিয়েছেন, তাদের কবিতায় আর গানে গানে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন”যে-দিন সন্ধ্যায় পলাশের বনে হিঙুল মেঘের আলােয় কোকিলের ডাক শুনেছি, সে-দিনই বুঝেছি আমার মৃত্যু অনেক দূরে;”।
রূপসী বাংলার কবির সেই জন্মভূমি বরিশালে এক যুগ পার করে আসা দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পুরো বসন্ত জুড়ে যেন পলাশ ফুলের ছোট্ট এক টুকরো রাজ্য। এই ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশে সারি সারি অগ্নিরাঙা পলাশ ফুলের চোখ জুড়ানো হাসি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারিদের মাঝে। পাশাপাশি আকৃষ্ট করছে ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও। চোখ জুড়ানো পলাশের হাসি যেন সবুজ ক্যাম্পাসের বুকে এক টুকরো আগুনের স্ফুলিঙ্গ।
এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন পলাশ গাছের নিচে। কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা আবার ফুল ছিঁড়ে তার প্রিয়জনের ফুলের খোঁপা বানিয়ে দিচ্ছেন ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পলাশ
এ বিষয়ে কথা হয় গণযগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অন্যন্যা সাহা এর সাথে তিনি বলেন, ‘প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বরিশালের নতুন খোলা নদীতীর ধরে গড়ে ওঠা এক প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্যময় ভূমি। ক্যাম্পাসটি এমনই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় স্থানে অবস্থিত যা বিভিন্ন ঋতুতে সেজে উঠে ভিন্ন ভিন্ন রুপে। শরতে যেমন স্নিগ্ধতা ছড়ায় কাশফুল, বসন্তে যেন মানব মনে কবি প্রতিভা সৃষ্টি করে আগুনঝরা পলাশ। ফেব্রুয়ারীর শেষের দিক থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে শোভা বর্ধন করছে লাল পলাশ। ক্যাম্পাসের ভিসি গেইট দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে মেয়েদের দুই হল এবং টিচার্স ডার্মেন্টারি অবদি যাওয়ার যে রাস্তাগুলোর দু’ধার পলাশ ফুলে ছেয়ে আছে, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বসন্তের মৃন্দুমন্দ হাওয়া আর বাতাসের ঝাপটায় গাছগুলো পলাশ মাটিতে পড়ে বিছিয়ে যাচ্ছে এ যেন প্রকৃতিপ্রেমির জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষার চোখজুড়ানো দৃশ্য ‘।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা পলাশ ফুল নিয়ে তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের খেলার মাঠের পাশের রাস্তাগুলোতে ফুটন্ত পলাশ ফুল যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য। মনে হয় পলাশ তার লাল রঙে নতুনভাবে ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলছে। গাছের ফুটন্ত পলাশ আর ঝড়ে পড়া পলাশ ফুলে চারপাশটায় অনেকটা ভালো লাগা কাজ করে।’
প্রসঙ্গত, পলাশের আরেক নাম ‘কিংশুক’। ইংরেজিতে যা Flame of the forest নামে প্রচলিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Butea monospera (বুটিয়া মনোস্পার্মা)। গাছটির উচ্চতা গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ মিটার। থোকায় থোকায় ফুলে পূর্ণ থাকে শাখা-প্রশাখা। কুঁড়ি দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। গাছটির বাকল ধুসর রং বিশিষ্ট ।
আঁকাবাঁকা শাখা-প্রশাখা ও কান্ডবিশিষ্ট পলাশের পাতা রেশমের মতোই সূক্ষ্ম। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে পলাশের বংশ বিস্তার করা হয়। সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের। আছে ঔষধি গুণাগুণও।