The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪

রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বসন্তের আগমনে লেগেছে ভালোবাসার হাওয়া

রাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ রুক্ষ,শুষ্ক ও বিষন্ন প্রকৃতির বুকে শীতের শেষে প্রাণের সঞ্চার নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। কোকিলের কুহু কুহু ডাক নিষ্প্রাণ প্রকৃতির বুকে যেন বসন্তের আগমনী বার্তা। কোকিলকে তাই হয়তো বলা হয় বসন্তের দূত। ফাগুনের উষ্ণ হাওয়ায় কোকিলের ডাক বিরহের বেদনাগুলোকে আরো মধুর করে তোলে। বসন্তের উদ্দেশ্যে বলতে মন চায়, হে বসন্ত, তুমি কি আমাকে দেখো না! তোমার জন্য আমি দিনের পর দিন মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকি, আসবা কবে। যাতে তোমার রঙে আমি রংধনু হইতে পারি। তুমি যে শেষমেশ এসেছো,তোমার মৃদুল বাতাসে আমার মন ফুরফুরে হয়ে গেছে।

শীতের জানান দেয় যেমন বাহারি পিঠাপুলি ও শাক-সবজী তেমনি ফুলের সমারোহ জানান দেয় বসন্তের। গাছগুলোতে নতুন পাতা গজায় বসন্তে। তেমনি রাবিপ্রবির ৬৪ একর আমাকে শোনাচ্ছে, মধুর অমৃতবাণী।

“বেলা গেল সহজেই, মরমে উঠিল বাজি, বসন্ত এসে গেছে।”

ফাল্গুনের হাত ধরেই আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। ফাগুনের মাতাল হাওয়া লাগে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে। এ প্রকৃতি রবীঠাকুর ফুটিয়ে তুলেছেন গানের মধ্য দিয়ে-

“ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান,
তোমার হাওয়ায় করেছি যে দান,
আমার আপনহারা প্রাণ,
আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ”

হ্যাঁ,ঠিক তাই। কাপ্তাই লেক ও পাহাড়ের ঘন সবুজের বুকে কোলাহলমুক্ত ৬৪ একরের ক্যাম্পাস রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(রাবিপ্রবি) বসন্তে ফিরে পায় তাঁর চিরায়ত লাবণ্যময়ী রুপ। শীতের রুক্ষ ও শুষ্কতা কাটিয়ে বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসে বইছে স্নিগ্ধ হাওয়া। পাতা ঝরা গাছের ডালে উঁকি মারছে নতুন পাতা। চারিদিকে মুখরিত হয়ে উঠেছে নানান রঙের ফুল,মৌমাছি ও প্রজাপতির মেলায়। কোকিলের মধুর কন্ঠের সুরে মাতিয়ে রাখে কেন্দ্রীয় মাঠে যাওয়ার রাস্তা। রাস্তার দুপাশের আমগাছের আমের মুকুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, ফলের গাছে বিভিন্ন পতঙ্গের আনাগোনা, আশেপাশের অল্পস্বল্প কাশফুল আর মেঘলা রোদ্দুরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় সকলের মনকে করে তোলে প্রাণোচ্ছল। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ার পাশে মাচায় বসে শিক্ষার্থীদের গানের আড্ডা মুখরিত করে রাখে ক্যাম্পাস। ক্যাফেটেরিয়ার মাচায় বসে গান উপভোগ করার সাথে সাথে ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় সিঙ্গেল ব্রীজ ও আকাশের সৌন্দর্য মনে এনে দেয় সতেজতা। সিঙ্গেল ব্রীজের সৌন্দর্য একেক ঋতুতে একেক রকম। কাপ্তাই লেকের পানি বাড়া কমার সাথে এই সৌন্দর্যের সম্পর্ক। সিঙ্গেল ব্রীজ কখনো পানির নিচে কখনো পানিতে ডুবুডুবু আবার কখনো পানিহীন। বর্ষার পরপরই পুরোটা পানির নিচে চলে যায়। আবার শীতের শুরু থেকে যখন পানি কমতে থাকে বসন্ত আসার সাথে সাথেই এক অন্যরুপ ধারণ করে। তখন বিকেলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখতির হয়ে উঠে সিঙ্গেল ব্রীজ।

বসন্তে ফুল দিয়ে আপন সৌন্দর্যে সাজে প্রকৃতি। ফ্যাকাশে প্রকৃতিতে এ যেন রঙের মেলা।

ব্যতিক্রম নয় রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসও। গাঁদা, বাগানবিলাস, শিউলি, কাঠমালতি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়াসহ নানান রঙের ফুলের দেখা মিলে।হলুদ-লাল-কমলা-বেগুনি রঙের ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাদদেশ ভরে উঠেছে নানান ফুলের সমারোহে। দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনায় ফুলের সমারোহ দেখে প্রকৃতি প্রেমিদের যেন চোখ ফেরানো দায়। যখন পাশ দিয়ে যাই তখন মনের অজান্তেই বলে ওঠে ” এই বসন্তের কালে সখী তুই থাকিস না আর আমার থেকে দূরে,এই রঙিন বসন্তে আমি একলা রবো কেমন করে।”

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের উদ্যোগে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থীদের আকর্ষন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন,”জলবায়ুগত কারণে এখন আর সব ঋতুর দেখা মিলে না। তবে এখনও রঙিন প্রকৃতি আমাদের জানান দেয় বসন্তের। আর এসময় রাবিপ্রবির প্রকৃতি সেজেছে আপন মহিমায়,বেড়েছে প্রাণচঞ্চলতা।”

সকলেই বসন্তকে বরণ করে নিয়ে প্রকৃতির সাথে নিজেকেও রাঙিয়ে ক্যামেরাবন্দি করছে নিজেকে এবং নিজের প্রিয়জনের সাথে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত এ নান্দনিক সৌন্দর্য ও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ক্যাম্পাসে এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে এবং প্রতিনিয়ত জানান দেয়, ”বসন্ত এসে গেছে।”

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.