The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪

মাতৃভাষা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মায়ের ভাষা। এই ভাষার জন্যই পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাঙালি জাতি। নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাণ খুলে কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এক ঝাঁক বাঙালি তরুণ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। তাদের সেই রক্তের বিনিময়ে আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে নিজস্ব একটা ভাষাসত্তা পেয়েছি। পেয়েছি প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ। আমাদের সেই স্মৃতি বিজড়িত ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের সামনে উপস্থিত। এই ভাষার মাসে মাতৃভাষা নিয়ে তরুণরা কি ভাবছেন তা জানতে চেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থী রিপন আল মামুন।

মাতৃভাষায় কথা বলার মধ্যেই পরম সার্থকতা নিহিত

১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বাঙালি পৃথিবীর বুঁকে ইতিহাস রচনা করেছে। একুশ আমাদের শক্তি, একুশ আমাদের গর্ব, একুশ আমাদের অনুপ্রেরণা। ভাষা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটানো। তবে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্ম সচেতন নয়। ভিনদেশি ভাষার মিশ্রণে কথা বলাকেই অনেকে স্মার্টনেস মনে করে। ফলে অবমূল্যায়িত হচ্ছে আমাদের প্রাণের ভাষা এবং ভাষাটি হারাচ্ছে নিজস্বতা। তবে মাতৃভাষায় কথা বলার মধ্যেই প্রকৃত সুখ অনুভব করা যায় এবং গৌরবের বিষয়। তাই আমাদের এই মাতৃভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র এবং জনগণ উভয়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই ভাষায় প্রচুর সাহিত্য ও গবেষণায় রচনায় নাগরিকদের অনুপ্রাণিত করতে হবে।

ঝুমা আক্তার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মায়ের মতোই বাংলা ভাষা মূল্যায়িত হোক

মাতৃভাষায় কথা বলার যে আনন্দ,স্বাধীনতা যা অন্য ভাষায় পাওয়া অসম্ভব। এক বিশাল বীরত্বের নাম বাংলা ভাষা। কেনোনা বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যাঁরা ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। রাজপথে সালাম,বরকত, রফিক ,শফিকসহ নাম না জানা অনেকের আত্মত্যাগে পাওয়া এই দিনটি।এখন শুধু আমাদেরই নয় – ২১ফেব্রুয়ারি এই বিশেষ দিনটি বিশ্বের সকল দেশেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ফলে বাংলা ভাষাভাষী দায়িত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে । দিন দিন ইংরেজি ভাষার আদলে বাংলা ভাষা চর্চা কমে যাচ্ছে। তরুণরা ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে ভাষার বিকৃতি ঘটাচ্ছে। অথচ বাংলা ভাষা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের বাহক। আমাদের ভাষার প্রতি আরো মনোযোগী হওয়া উচিত। ইংরেজি ভাষাকে বেশি গুরুত্ব এবং বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা আমাদের সামনে চরম দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে কীর্তিমান মানুষ নিজ ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষায় অবদান রাখতে পারেন। তাই ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

জয়া পালিত, শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

“আমিই সালাম আমিই রফিক আমিই জব্বার”

জীবনে আর একটি ভাষার মাস পেয়ে গেলাম। এ মাস আমাকে প্রচুর ভাবায়। বাঙালি যে বীরের জাতি এ জাতি কভু ভীরু কাপুরুষ নয় তা বারবার স্মরন করিয়ে দেয়। বাংলার দামাল ছেলেরা নিজের জীবনকে পরোয়া না করে মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল। ২১শে ফেব্রুয়ারি কথাটা শুনলেই আঁতকে উঠি নিজেকে খুঁজে পাই সালাম রফিক জব্বারের মাঝে। আমি যদি ৫২ তে রক্ত না দিতাম তাহলে কিভাবে পেতাম এই ভাষার সত্ত্বা পেতামই বা কি করে মায়ের মুখের ভাষা। মায়ের ভাষার টান কি নিজের জীবনকেও হার মানায়? ৫২র আন্দোলন শুধু ভাষা রক্ষার আন্দোলন ছিল না এ ছিল বাঙালি জাতির সত্ত্বা রক্ষার আন্দোলন যার মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। আজ বাঙালি, বাংলা ভাষা সবকিছুই প্রতিষ্ঠিত তবে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত এ জাতির এ ভাষার যেন অপব্যবহার না হয় , তাহলে আমরা প্রত্যেকে সালাম রফিক জব্বার হয়ে উঠবো, অপরাধীর লেশটুকু ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবো না।

মোঃ নিরব চৌধুরী, সমাজ কর্ম ১৮, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির অহংকার

২১ ফেব্রুয়ারি এমন একটি দিন যে দিনটি না আসলে আমরা কখনোই মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। পেতাম না একুশের চেতনার হাত ধরে লাল সবুজ পতাকা, সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বাংলা আমার মায়ের ভাষা
শহীদ ছেলের দান
আমার ভাইয়ের রক্তে লেখা
ফেব্রুয়ারির গান

২১ ফেব্রুয়ারি যেন বাঙালির অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার, খন্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকারের,অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের চিরন্তন সংগ্রামের স্মারক, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণ একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র,বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার চেতনা। যে চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে দারিদ্রমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ আগামীর দিকে।

লামিয়া আহমেদ, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলা ভাষা আমাদের গৌরব ও চেতনা

মাতৃভাষা ছাড়া আর কোনো ভাষাই নিজের কাছে শ্রুতিমধুর হয় না। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। দীর্ঘ হাজার বছর ধরে বিভিন্ন আদলে থেকে এই ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে। বাংলা ভাষার মত সহজ-সরল আর সাবলীল ভাষা আর হতেই পারে না। আর মায়ের বুলি থেকে শুনলে প্রাণ উজাড় হয়ে যায়। মায়ের মুখে বাংলা ভাষা সত্যিই চমৎকার। আর এই ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রাণ দেন রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর এবং আরও অনেকে। তাদের ত্যাগ স্বীকার এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পেয়েছি রাষ্ট্রভাষা। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ভাষাকে রক্ষা করার জন্য তাজা রক্ত ঝরাতে হলো। অথচ আমাদের বাংলা ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্তের প্রয়োজন হয়েছে। এটা আমাদের গৌরব ও চেতনার অংশ। তাই আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে হবে। এই ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতেই হবে। অন্যথায় নিজের ভাষাকে পরিপূর্ণ সম্মান দিতে ব্যর্থ হব। তাই আমাদের বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে হবে, এই ভাষাকে সুউচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে।

নাফিস সাকিব ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস!

বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায় হচ্ছে তার সংগ্রামের কালগুলো। এক্ষেত্রে উজ্জ্বলতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৫২ সালের ভাষার জন্য আন্দোলন। পৃথিবীতে আমাদের মত জাতি বিরল যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, তাই বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার এবং পৃথিবীর অন্যদের থেকে আলাদা। তাই আমাদের বাংলা ভাষা চর্চায় অতি উৎসাহী হতে হবে,এক্ষেত্রে সরকারি প্রকাশনাগুলো জোরালো ভুমিকা রাখতে পারে। যেমন: বাংলা একাডেমি, ভাষা ইনস্টিটিউট এরা কাজকে এগিয়ে নিতে পারে। আমরা ইংরেজি ভাষার প্রতি অতিরিক্ত দুর্বলতা প্রকাশ করছি।সরকারি কাজ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আমরা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকি, তা দোষের নয় তবে বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে হলে আগে বাংলা ভাষাকে উত্তম রূপে আবিষ্কার করতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে নিজ ভাষাকে। বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো, পত্রিকা, ভাষা ও সাহিত্য চর্চা গবেষণা প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে। এবং বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এর বাঙালিত্ব, জাতীয় সত্তা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনগত অবস্থান এবং ভাষা আন্দোলনের অঙ্গীকার। তাই বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা এবং বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে লালন করতে হবে।

সাদিয়া জাহান সুরভী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.