বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: সমাজবিরোধী কাজ ছাড়া শিশুদের সকল কাজ তাদের পছন্দানুযায়ী করতে দেওয়া প্রয়োজন। তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশকে তরান্বিত করতে হলে তারা যে কাজে আগ্রহী সেই কাজ করতে দিতে হবে। কেউ ছবি আঁকবে, কেউ গান করবে, কেউ ডাক্তার হবে, কেউ প্রকৌশলী হবে। আমরা যদি তাদের পছন্দ বা পেশা নির্ধারিত করে দেই তাহলে সেই কাজ তারা আন্তরিকতার সাথে করতে পারবে না এবং সফল হতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ময়মনসিংহের আয়োজনে দ্বিতীয় জাতীয় শিশু চিত্রকলা প্রদর্শনী ২০২৩ এর শুভ উদ্বোধন করে সুধীসমাবেশে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান অতিথি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহিদদের, শহিদ জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, একসময় আমাদের পরিবার ঠিক করে দিতো সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। তবে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং এমন কথাও কমে গেছে। বিশ্বে এখন হাজারো পেশা রয়েছে। শুধু দক্ষতার প্রয়োজন। দক্ষতা অর্জন করলে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে কাজ করা সম্ভব। কোন কাজই ছোট নয়। দক্ষতানুসারে সকল পেশাই সম্মানের। আমরা আমাদের সন্তানকে খেলতে দেই না, গান গাইতে দেই না, ছবি আঁকতে দেই না। অথচ খেলে, ছবি এঁকে বা গান করেও বিশ্বকে জয় করা সম্ভব। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা আজ ফুটবল খেলে বিশ্বে ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছে।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিশ্ব জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’ উল্লেখ করে মাননীয় উপাচার্য বলেন, আজ পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয়। একটি স্মার্ট ফোন থাকলেই আমরা বিশ্বের যেকোন তথ্য মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাই। এখন আমাদের চিন্তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন আরো হতে হবে। সন্তানদের মাঝে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে হবে। অন্যের সাথে তুলনা না করে তাদের কাজের আগ্রহকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি শিশু তার বাবাকে তার জন্য নায়ক হিসেবে অনুসরণ করে। তাই আমাদের পরিবার হতে সর্তক হতে হবে। আমাদের পরিবারে ছোট হলেও একটি গ্রন্থাগার থাকতে হবে। বাবা পড়লে ছেলেও পড়বে, আর বাবা যদি মোবাইল দেখতে থাকে তাহলে সন্তানও মোবাইল দেখতে থাকবে। তাকে শুধু দোষ দিয়ে বা নিষেধ করে কোনো কাজ হবে না। প্রত্যেক শিশুরই মেধা আছে নিজস্ব সত্তা আছে, তাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে। শিশুদের আঁকা চিত্রকলা ঘুরে দেখে ড. সৌমিত্র শেখর মুগ্ধ হন এবং শিশুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, অন্তরদৃষ্টি দিয়ে শিল্পি তার মনের ভাষা ব্যক্ত করে। ছোট ছোট শিশুরা একাজটিই করেছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
‘শিশুরা থাকুক হাসিতে শিশুরা থাকুক খুশিতে ‘ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত চিত্রকলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। এরপর প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর এবং মন্তব্য বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। সারাদেশ থেকে প্রাপ্ত শিশুদের আঁকা ছবির মধ্য থেকে বাছাইকৃত সেরা বিজয়ী ১৫টিসহ নির্বাচিত ১০০টি ছবি স্থান পায় এই প্রদর্শনীতে। জামালপুরের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. শাহারিয়া আক্তার জুঁই তার নিজের আঁকা ছবি মাননীয় প্রধান অতিথিকে উপহার দেন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফুল হক মৃদুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চিত্রকলা প্রদর্শনীতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার লায়লা আরজুমান্দ বাণু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ময়মনসিংহের জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।