রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে প্রতিনিয়তই জন্ডিস আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে ৩৫২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা করার পর ১৩৭ জনের দেহেই জন্ডিস ধরা পরে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
রাবির মেডিকেল সেন্টারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে গত এক সপ্তাহে ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা করালে হেপাটাইটিস এ অর্থাৎ জন্ডিস ধরা পড়ে ৫৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে। এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সংখ্যাটটি বেড়ে ১৩৭’এ দাঁড়ায়। চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, অ্যাকাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমারসিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। আর টিউবওয়েল ও মোটরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা। আর শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়।
শেরেবাংলা হলে থাকেন নৃবিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ। তিনি বলেন, আমি সকালেও খাবারের জন্য নলকূপ থেকে পানি নিয়েছি। পানিতে খুবই ময়লা এবং দুর্গন্ধ থাকছে, ফলে পানি খাওয়া যাচ্ছে না। সাবমারসিবল পাম্পের পানি না পাওয়ায় এসব মাঝে মাঝে পান করতে হয় আমাদের। ফলে আমাদের মাঝে অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের কারণে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক সময় পানি পেতেও আমাদের কষ্ট হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের নলকূপগুলোর গভীরতা ১০০-১৫০ ফুট হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না তারা। নলকূপ থেকে ময়লা ও লালচে রংয়ের পানি বের হয়। মাঝেমধ্যে পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। নলকূপ ছাড়া ট্যাপকলের পানিতে আরও বেশি ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকে। পানি সরবরাহ করা ট্যাংকিগুলো খুবই অপরিষ্কার। ফলে সব সময় সেখানে ময়লা জমে থাকে।
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাসির বলেন, নিরাপদ পানি পান করার জন্য হলগুলোতে সাবমারসিবল পাম্প বসানো হলেও সেখান থেকে অনেক সময় আমরা সরবরাহ পাই না। দিনে তিনবেলা চালু করা হয় এসব পাম্প। অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কাজে হলের বাহিরে থাকি। হলে ফিরে নলকূপ থেকে আয়রনযুক্ত পানি খেতে হয় আমাদের। এসব দূষিত পানি পান করার ফলেই হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, শীতকালে ঠান্ডার কারণে মানুষ চলাচল কম করে, যার ফলে রক্ত চলাচলও কম করে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের কারণেই জন্ডিস হচ্ছে। এটি মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সচেতনতা। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকে তাদের সাবমারসিবলের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত টিউবওয়েল বা সাবমারসিবলের বিশুদ্ধ পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। যাদের লক্ষণ খারাপ মনে হয়, তাদের দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেদিন থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সেদিন থেকেই আমরা মেডিকেল সেন্টারকে বলে দিয়েছি সচেতনভাবে দেখার জন্য। এছাড়াও আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জানাতে চেষ্টা করেছি তারা যেন যেখান-সেখানের পানি পান না করে। টিউবয়েল বা সাবমার্সিবলের বিশুদ্ধ পানি পান করে।