রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরে বন্ধ ৭ মাসেরও বেশি
বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) পুরো বছরের সাপ্তাহিক, বিভিন্ন রকম সরকার ঘোষিত ছুটি মিলে এক বছরের মধ্যে বন্ধ থাকে ৭ মাসেরও বেশি সময়।
২০২৪ সালের ক্যালেন্ডারে গননা করে দেখা গেছে এবছরে সাপ্তাহিক বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার মিলে মোট ছুটি পড়েছে ১৫৬ দিন যা ৫ মাসের অধিক সময় যার মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবারে ৫২ ।
অন্য দিকে রোজা, ঈদুল ফিত, ঈদুল আজহা, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন এবং অনন্য মিলে ৭১ দিন যা প্রায় আড়াই মাসের মতো।
এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা কর্মচারী বছরে ছুটি কাটান ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২২১ দিন যা প্রায় ৭ মাসেরও অধিক সময়।
সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে যেখানে অন্যন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার ও শনিবার মিলে ৫ দিন খোলা থাকে সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবারসহ বন্ধই থাকে ৩ দিন যা হিসেব করলে দেখা যায় ১৫৬ দিন। এতে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে বিশ্বজ্ঞানের পঠন পাঠন হয়ে থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ব্যাচ রানিং আছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। সেই তুলনায় শিক্ষক সংকট তো রয়েই গেছে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর স্যারেরা মাঝে মাঝে বলেন, পড়ানোর মতো কিছু নাই, এগুলো মেসে বসেই পড়া যায়। গত সেমিস্টারে প্রথম কোর্সের ক্লাস হয়েছে চারটি। “এক বলে চার ” মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থনীতি বিভাগের অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার শনিবার থাকা সত্ত্বেও দেশের সংকট কালে বৃহস্পতিবার কে সাপ্তাহিক ছুটির আওতায় আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছুটি থাকলেও ক্লাস পরীক্ষা ঠিকই হচ্ছে, এতে করে পরিবহন, মেডিকেল, লাইব্রেরি এবং প্রশাসনিক সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার লাইব্রেরি বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের করে দেওয়া লাইব্রেরি ছাউনিতে পড়াশোনা করে শতাধিক শিক্ষার্থী, এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন মেয়ে শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের আবাসিক হল পাশে থাকায় ছাত্ররা সহজে হলের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে পারলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক কাজ যেমন সার্টিফিকেট বা মার্কশিট উত্তোলন যেগুলোর জন্য সময়ক্ষেপন হচ্ছে দিনের পর দিন। হিসেব করে দেখা গেছে বছরে প্রায় সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়া। যে সংকট মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তা তো মোকাবিলা হচ্ছেই না বরঞ্চ দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের কাজ।
এই বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও উপদেষ্টা পরিচালক সৈয়দ আনোয়ারুল আজীমের সাথে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিনটি শিক্ষকরাও অফ করে ফেলছে, সাথে শিক্ষার্থীরাও, আমি যদি একটু শিক্ষার্থীদের দায় দেই তাহলে বলতে হয় শিক্ষার্থীরা এ দিন ক্লাস করতে আগ্রহী না, যদি আগ্রহ না থাকে তাহলে তো আমি ক্লাস করাতে পারবো না। এখন কেউ যদি ক্লাস না নেয় তাহলে এটা প্রশাসনের দায় না, তবে সামনে হয়তো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এম কে পুলক আহমেদ/