The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪

নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার জবির মোত্তালিব

সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: “যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, দেখা হবে বিজয়ে” এই লাইনটিকেই যেন হৃদয়ের মানসপটে ধারণ করে যুগিয়েছেন শক্তি। কখনও নিরাপত্তাকর্মী, কখনও টিউশনি, কখনও প্রুফ রিডার, সামনে যা কাজ আছে তা করেই যেন এই বন্ধুর পথচলা।

আর্থিক দুরবস্থার কারণে এক সময় চাচার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় কিছুদিন পড়াশোনাও বন্ধ ছিল। অথচ থেমে যাননি মোত্তালিব। সব বাধা পেরিয়ে সবশেষ ৪৩ তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) তাঁকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের বর্গাচাষী মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির সন্তান এম এ মোত্তালিব মিহির। বাবা গ্রামে বর্গাচাষী আর মা গৃহিণী, যেন একমাত্র স্বপ্ন কেবল সন্তান মোত্তালিবের ভবিষ্যতের উপরই ছিল।

মোত্তালিব বলেন “জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আশা করি নিজের উপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব। ”

তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে যখন তিনি কলেজে ভর্তি হন তখনই আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে পড়তে হয় পুরো পরিবারকে। ফলে কলেজের পড়াশোনাও কিছুদিন বন্ধ ছিল। তাই স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিও নিতে হয়। একদিকে চাকরি অপর দিকে পড়াশোনা। তবুও এসএসসিতে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ ফাইভ এবং এইচএসসিতে ৪.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

মোত্তালিব বলেন, ”এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা ছেড়ে দিই। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেই। প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা ডিউটি করতাম। সারাদিন গেইটে বসে থাকতে হতো। সময় কাটতো না তাই মাঝে মাঝে বই পড়তাম। একদিন ছুটি নিয়ে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করি। সে ঢাকায় এসেছে কোচিং করে এডমিশন দিবে। তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার সেই উদ্দীপনা আবারো জাগে। সিকিউরিটি চাকরির বেতন হতে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হয়ে যাই একটি কোচিংয়ে। ”

এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চান্স পান। সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যান এবং ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শুরু হলো নতুন সংগ্রাম। প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা ডিউটি করে কলাবাগান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ক্লাস করতে হতো। ভাড়া বাঁচানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই যাতায়াত করত।

মোত্তালিব বলেন একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় স্টুডেন্ট ভাড়া ছয় টাকা না থাকার কারণে সদরঘাট থেকে কলাবাগান পর্যন্ত হেটে আসতে হয় তাকে।

এভাবে কখনো সিকিউরিটি চাকরি কখনো বা টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছে তাকে।

মোত্তালিব বলেন, “শত বাঁধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি যেখানে ছেলেমেয়েদের নাম দস্তখত শেখার পরে স্বপ্নই থাকতো বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবি নি যে বিসিএস এর মতো এতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটা চাকরি করব। ”

ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিবে তাদের উদ্দেশ্যে মোত্তালিব বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে সফলতা আসবেই ইনশাল্লাহ।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.