যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটর নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে ১৭ জন অপহরণের ঘটনায় ৬ জনকে আসামী ও আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা করে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (০৮ ডিসেম্বর) এ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থী মোঃ আরাফাত হোসেন ইমন। এতে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বেলাল হোসেনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।
এদিকে অপহরণের আলামত ঢাকতে সংশ্লিষ্ট শহীদ মসিয়ূর রহমান হল এর সিসি টিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অপহৃতরা হল এ থাকলেও তাদের খুঁজে না পাওয়া ও একইসাথে সিসি টিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনতাই হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট হলটির প্রভোস্ট ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান জাহিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
সিসি টিভি ফুটেজ ছিনতাইয়ের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অপহৃতরা মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ.ম.র হলের সিসি টিভির হার্ডডিস্ক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সোহেল রানা এ অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও প্রভোস্ট স্যার দাড়িয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে কেউ একজন এসে কিছু একটা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। হল অফিসের কর্মচারীরা তাকে ধরতে পারেনি। এর সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এদিকে মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, যবিপ্রবিতে চাকরি প্রার্থীদের অপহরণের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে ঘটনার দিন রাতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। আসামীদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বেলা বারোটায় তল্লাশি চালিয়ে শ.ম.র হল প্রভোস্ট হল থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করতে না পারা অথচ বিকাল সাড়ে তিন টায় ঐ হল থেকেই অপহৃতদের মুক্তি, সিসি টিভির ফুটেজ ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও অপহরণকারীদের সাথে শ.ম.র হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান জাহিদের যোগসাজোস থাকতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
ছাত্র ইউনিয়ন যবিপ্রবি সংসদের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, হল কেন্দ্রিক ফৌজদারি অপরাধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে; এই বছরেই শ.ম.র. হলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আঁটকে রেখে চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে; ল্যাপটপ, মোবাইল এমনকি লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সোলার প্যানেলের ব্যাটারি চুরির মত ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমরা। সর্বশেষ এই ১৭ জন চাকরি প্রত্যাশিদের আটকে রেখে পরিক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ এবং হার্ডডিস্ক চুরির মত ঘটনা; যা বিশ্ববিদ্যালয় হলের নিরাপত্তা ইস্যুকে হুমকির মুখে ফেলেছে! সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক চুরির ঘটনার দায় অবশ্যই প্রোভোস্ট বডির উপর বর্তায় এবং উক্ত অপহরণের ঘটনার সাথে সিসিটিভি টুটেজের হার্ডডিস্ক চুরি একই সূত্রে গাথা! তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করা৷
যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, একজন দুজন পরীক্ষার্থী হতো আলাদা বিষয় সেখানে একটি ছোট হল এ ১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিল, হল প্রভোস্ট তাদের খুঁজে পাবেন না এটি হতেই পারে না।
হার্ডডিস্ক ছিনতাই এর বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস টাইমে কেউ এতজন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সামনে হল প্রভোস্ট এর রুমে ঢুকে হার্ডডিস্ক চুরি করলো কেউ কিছু জানলো না এটি খুবই হাস্যকর। শুধু এই ঘটনা নয় হলের অগণিত অপকর্মের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ হল প্রভোস্ট দেননি।
বর্তমান হল প্রভোস্ট শ.ম.র হলকে একটি ক্যান্টনমেন্ট এ পরিণত করেছেন, যা ইচ্ছে করছেন, ওপেন দূর্নীতি করছেন, কথায় কথায় নিজেকে বড় মাস্তান বড় ছাত্রলীগার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকী ধামকী দেয়া সহ খারাপ আচরণ করছেন, উনার অসংখ্য অপকর্মের অগণিত প্রমাণ রয়েছে । সুতরাং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ জানাবো এমন দূর্নীতিবাজ হল প্রভোস্টকে দ্রুত হল থেকে প্রত্যাহার করে শ,ম,র হল কে কলঙ্ক মুক্ত করা হোক।
এবিষয়ে জানতে প্রভোস্ট ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান জাহিদের কাছে মুঠোফোনে কল দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।