শিউলি ফুলের সুভাসে সুভাষিত বেরোবির ক্যাম্পাস
বেরোবি প্রতিনিধি: কবির ভাষায়, শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ /এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই…’।এভাবে কবি তার কবিতার মাধ্যমে শিউলিফুলের অপরুপ সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছেন।
ধবধবে সাদা, গায়ে নেই কোন কাদা, রাতে ফোটে ফুল, দিনে যায় ঝরে,সুগন্ধি ছড়ায় আকাশ বাতাস জুড়ে।এমন এক ফুলের নাম নাম শিউলি। অনেকে শেফালি নামেও চেনেন। শিউলি দিনের আলোয় দেখতে পাওয়া যায় না। এই ফুলটি সন্ধ্যার পরপরই প্রস্ফুটিত হয়ে সারা রাত আশপাশ সুবাসিত করে। রাতের আঁধারে নিজের রূপ পুরোটা ছড়িয়ে, বাতাসে বিলিয়ে দেয় নেশা লাগানো সুবাস।যার গন্ধে মাতোয়ারা হন আবাল বৃদ্ধ বনিতা থেকে সকল বয়সের সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ। আর ভোরের আলো ফুটলেই এক বুক চাপা কষ্ট নিয়ে ঝরে পড়ে নিচে।যেন সাদা-কমলার গালিচা বিছিয়ে রয়েছে। এই গালিচার উপর ভোরের শিশির যখন পড়ে তখন শিউলির রূপকে আরো অপরূপ করে তোলে। ছয়-সাত পাপড়ির এই ধবধবে সাদা ফুলটির নিচে কমলা রঙের একটি টিউবের মতো থাকে। ফুলটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। হাতে নিয়ে নাকে ফুলের সুবাস নিতে মন চায়। এমনই এক মন কেড়ে নেওয়া ফুলের নাম শিউলি।
আমাদের এ দেশে একেক ঋতুতে একেক ধরনের ফুল ফোটে। এই ফুলগুলো দেখতে যেমন অপরূপ লাগে; ঠিক তেমনি আমাদের মনটাকেও আনন্দে ভরিয়ে তোলে। এই যেমন বর্ষায় কদমফুল। শরতে কাশফুল, শিউলি, কামিনী। এ ছাড়া কিছু ফুল আছে যেগুলো সারা বছরই ফোটে যেমন গোলাপ, জবা, বেলি, গন্ধরাজ ইত্যাদি। ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। ফুলের একটি অনন্য প্রভাব আছে আমাদের মনের ওপর। কারণ যখনই আমরা কোনো ফুল দেখি তখন আমাদের মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। ফুলকে আমরা হাত দিয়ে স্পর্শ করে এক অন্যরকম আনন্দানুভব করি। আমরা যখন বিষণ্ন থাকি তখন ফুলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য আমাদের সেই বিষণ্নতাকে দূর করে দেয়। মনে ছড়িয়ে দেয় আনন্দানুভূতি।শিউলি মূলত শরৎকালের ফুল।তবে হেমন্ত এর থেকে বঞ্চিত নয়।
এমনই এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সবুজ ক্যাম্পাসে আচ্ছাদিত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) । এই ক্যাম্পাসের রাতের আধারে ফুলভরা শিউলিফুলের সুঘ্রান পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি রোডের দুইপাশে লাগানো শিউলি ফুলের গাছে অপরুপ ঘ্রান ছড়াচ্ছে। সন্ধার পর ক্যাম্পাসে অনেকে ছুটে আসে শিউলির এই ঘ্রান নিতে।কারণ শিউলি ফুলগুলো সন্ধ্যার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সুগন্ধে সুবাসিত করে তুলে। প্রতিদিন গাছের তলায় শতশত শিউলির আগমন ঘটে। ভোরে অনেকে আসেন এই ফুলের সুভাস নিতে। দেখলে যেন মনে হয় শরৎ এর সকালে ফুল গুলো সব স্নান করেছে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা নিরব ক্যাম্পাস শিউলির সৌরভে থাকে সদা জাগ্রত। ফলে যে কেউ কাউকে সহজে আকৃষ্ট করে। এ সময় কেউ আবার ফুল গুলো দিয়ে সাজিয়ে নিজের নাম লেখে।কেউ ফুলগুলো কুড়িয়ে দুই হাতে করে সুগন্ধ নিচ্ছে।কেউ বা বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখেন,অনেকে আবার এগুলো সংরক্ষণ করে বাসায়,কিংবা মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ফুলগুলোর ছবি ধারন করে রাখেন।আবাসিক হলগুলো থাকা শিক্ষার্থীদের ঘুম ভাঙ্গে শিউলির সৌরভে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন,রাত যত গভীর হয় শিউলি ফুলের ঘ্রান তত বৃদ্ধি পায়।তাইতো রাতে ক্যাম্পাস যেতেই হবে মনটাকে সুভাসিত করতে , আর শিউলি ফুলের ঘ্রান কার না ভালো লাগে। রাতের ক্যাম্পাস মানেই ভিসি রোডের শিউলি ফুলের ঘ্রাণ। তবে এটা যেন শুধু রাতেই হয়।রাতের ফোটা শিউলি রাতেই তার সুগন্ধ ছড়ায়। সেদিন তুলেছিলাম শিউলি ফুলের ছবি কিন্তু তার স্বার্থকতা তো কেবল তার সুগন্ধে যা মনকে দোলা দেয়।তাইতো ভালোবাসি বেরোবি তোমাকে আর তোমার অপরুপ সৌন্দর্যকে।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সারাহ বলেন,শিউলি ফুলের পাগল করা সুবাসে মুগ্ধ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ছোট ছোট শুভ্র এই ফুলের সৌন্দর্য সবাইকেই আকৃষ্ট করে। সৌন্দর্য ও সুবাসে অনন্য এক ফুল হলো শিউলি। আর এর সৌরভ চারিদিক করে সুরভিত সুভাষিত। এমনই এক পরিবেশের সৃষ্টি করে আমার প্রাণের ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর এ।
মুন্না বিশ্বাস নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বেরোবি ক্যাম্পাস যখন রাতে প্রবেশ করি ভিসি রোডে শিউলি ফুলের ঘ্রাণে যেন মুগ্ধ হয়ে যাই। শিউলি ফুল রাতে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে নিজেকে যেন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলি,,,বেগমকে বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর শিউলি ফুলের যে সমাহারে সবুজ প্রকৃতিকে প্রত্যেকটি মানুষকে মুগ্ধ করে।
উল্লেখ্য,দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান উত্তরে নেপাল অঞ্চল পর্যন্ত শিউলি ফুলের দেখা পাওয়া যায়। তবে এর আদিনিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। শিউলি ফুলের ইংরেজি নাম : Night-flowering Jasmine.পরিবার : Oleaceae. উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম : Nyctanthes arbor-tristis. লাতিন Nyctanthes–এর অর্থ হচ্ছে ‘সন্ধ্যায় ফোটা’ এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে ‘বিষন্ন গাছ’। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে ‘বিষন্ন’ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এ রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। দিনের আলোতে শিউলি ফুল উজ্জ্বলতা হারায় কখনও কখনও একে ‘tree of sorrow’ বা ‘দুঃখের বৃক্ষ’ও বলা হয়।
এম কে পুলক আহমেদ/