The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

রাবি ক্যাম্পাসে হাজারো পেরেকেবিদ্ধ গাছ, প্রচারণায় উন্মত্ত পদপ্রত্যাশীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: গাছ মানুষের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষকে অক্সিজেন প্রদান করেও থাকে। আমাদের জীবনে গাছ বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে। তাইতো কবি মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়’। কিন্তু বর্তমানে গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার সাঁটিয়ে গাছের জীবন চক্র ধংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কের পাশের গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের ব্যানার সাঁটাতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলকে বিরত থাকতে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালায়। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। নির্দেশনার পরেও গাছগুলোতে ঝুলছে ব্যানার।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের গেট পর্যন্ত প্যারিস রোডের গনগনশিরিশ গাছে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনের দেবদারুগাছ গুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান জায়গায়গুলোর প্রায় প্রতিটি গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের পদপ্রত্যাশীরা। এতে গাছগুলো মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্যারিস রোডে যেসব নেতার সাইনবোর্ড দেখা গেছে তাদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু প্রমুখ।

এদিকে গাছে পেরেক বিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্ত বাস্তবে সে আইন কার্যকর হয়নি।

সিটি কর্পোরেশন আইনে ১৯৯০ এর ৯২ ধারার ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া এবং গাছে সাইনবোর্ড লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও আছে। আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই।

সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি সাইনবোর্ডগুলো দ্রুত তোলার ব্যবস্থা করবো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সরকার আইন করেছে কিন্তু আইনকে যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সঠিকভাবে সেটা পালন করছে না। কোনোভাবেই এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। যদি সকলকে সচেতন করা যায় তাহলে আগামী দিনে গাছ নিধন কমে আসবে বলে তিনি মনে করছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবির বলেন, গাছে পেরেক ঢুকানো একদম ঠিক না। পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছ ব্যাথা পায়। গাছ অস্বস্তি প্রকাশ করে। আমাদের যেমন নার্ভাস সিস্টেম আছে গাছেরও তেমন সিস্টেম কাজ করে অন্য ভাবে। গাছ কথা বলতে পারে না তাই এভাবে হাজার কষ্ট সয্য করে।

এছাড়াও তিনি বলেন, পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছ আক্রান্ত হয় নানা রোগে। পেরেক একবার ঢুকালে সেখানে গর্ত হয়ে থাকে। পরে সেই গর্তে নানান রকমের জীবাণু প্রবেশ করে। অনেক গাছ সেই জীবাণুগুলো সয্য করতে পারে না। তখন গাছের গায়ে টিউমার হয়ে যায়। একপর্যায়ে গাছগুলো মারা যায়। মানুষকে উৎসাহিত করা উচিৎ যেন গাছে পেরেক না মারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, গাছগুলো বাঁচাতে আমরা যদি একে অপরের সহযোগিতা না করি তাহলে তো গাছগুলোর ক্ষতি হবেই। এই ক্ষতিটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হবে না ক্যাম্পাসের প্রতিটা মানুষের জন্য ক্ষতি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি গাছগুলোতে দরকার হলে দড়ি বা তাড় দিয়ে বেধে সাইনবোর্ডগুলো লাগাতে। বা ফ্রেম তৈরি করেও যাত ধরনের প্রচারণা চালানো দরকার তারা করুক। সবার উচিত গাছগুলোকে বাঁচানো।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.