The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪

‘নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরী’

আমান উল্লাহ, বাকৃবি: আনোয়ার সাদাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে চারঘাট উপজেলার স্নিগ্ধ গ্রাম শলুয়াতে। ২০১০ সালে সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্নাতক ও ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ৪০ তম বিসিএস থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে কুড়িগ্রামে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএসে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তার এই সাফল্যগাথা, অনুভূতি, নবীনদের জন্য পরামর্শ সহ বিভিন্ন বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে লিখেছেন মো. আমান উল্লাহ।

বিসিএস প্রস্তুতি শুরু

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই অনার্সের পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ, হলের সুযোগ-সুবিধা, সিনিয়রদের বিসিএস সাফল্য আমাকে ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। মূল পড়াশোনাটা শুরু হয়েছিল অনার্স শেষে, তবে এর আগে সিলেবাস বুঝে বেসিক সাবজেক্টগুলোতে (ইংলিশ,ম্যাথ,বাংলা) নিজের দূর্বল দিকগুলো বের করে সেগুলো মেকআপ করার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, অনার্স লাইফে একজন ছাত্রের একাডেমিক পড়াশোনা ফার্স্ট প্রায়োরিটি হওয়া উচিত, এর পাশাপশি সময় পেলে বিসিএস বা অন্যান্য সরকারী চাকুরীর জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা অভিজ্ঞতা

আমার মতে, বিসিএসের মূল চ্যালেন্জ হলো প্রিলিমিনারি পর্ব। যেখানে ১২০ মিনিটে আপনার জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, পড়াশোনার গভীরতা ও কৌশলের সর্বোচ্চটুকু দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনের সকল অর্জিত জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও দক্ষতার প্রয়োগ ঘটে, এক্ষেত্রে আপনি কতটুকু জানেন, তার থেকে অধিক গুরত্বপূর্ণ হলো আপনি কতটা যৌক্তিকভাবে সময়, মানবন্টন বুঝে পরিষ্কার ও মানসম্মতভাবে আপনার ভাবনা গুলো পরীক্ষার খাতায় তুলে ধরতে পারছেন। আর ভাইভার বিষয়ে বলতে গেলে, আপনি হবু ক্যাডার অফিসার হিসেবে নিজেকে ঠিক কীভাবে প্রস্তুত করেছেন, আপনি কতটা পরিশ্রমী, সাথে আপনার ভাগ্য কতটা সহায়, এর সবটুকুর প্রতিফলন ঘটে ভাইভাতে।


সফলতার প্রেরণা

স্কুলে পড়ার সময় ক্লাস নাইনে একবার প্রচন্ড খারাপ রেজাল্ট করেছিলাম। প্রায় অনেক দিন কৈশোরের অসহায়ত্বে দিন পার করেছি, যদিও বরাবরের মত ঐ সময়টাতে আমার বাবা-মা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছিলেন। আমি সেসময় প্রথম বুঝেছিলাম, পরিশ্রমহীন মেধার কোন মূল্য নেই। এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঐ স্মৃতি মাথায় রেখে সবসময় সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি, মহান আল্লাহ নিরাশ করেননি কখনো।

জীবনের লক্ষ্য

আমার বাবা-মা আমার অনুপ্রেরণার আরেক নাম। এছাড়া আমার বোন, দুলাভাই, বন্ধুমহল, সিনিয়র- জুনিয়রসহ সকল শুভকাঙ্ক্ষী সাহস জুগিয়েছে, আস্হা রেখেছে সবটা সময়, এজন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। ছোটবেলাতে এক স্কুলশিক্ষকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম, ‘আমি বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চাই’, খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক থাকলেও বাড়ির একমাত্র ছেলে হিসাবে বাবাকে ব্যাবসায়িক কাজে সাহায্য করতে হতো বলে ওই ইচ্ছাকে আর এগিয়ে নিতে পারিনি। পরবর্তীতে মনে হয়েছে, এমন কিছু করবো যেন, আমার পরিবার সর্বোচ্চ সম্মানিত হয়, এই মন্ত্র থেকেই উচ্চশিক্ষা ও বিসিএসে পথচলা।

স্কুল জীবনের স্মৃতি

স্কুলজীবনের অনেক স্মৃতি আমাকে আজও রোমন্থিত করে, বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে কাটানো অগণিত মুহূর্ত আজও অমলিন। কলেজ জীবনের সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল, বুঝে ওঠার আগেই শেষ, তবুও কলেজের প্রতি বিশেষ টান কাজ করে। আর বিশ্ববিদ্যালয় আমার আরেকটি পরিবার, যে পরিবার আমায় পরিচয় দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। ১২৫০ একরের আলো বাতাস মেখে বড় হয়েছি, ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি, যে স্বপ্ন আজ বাস্তব। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এই আবেগ অটুট থাকবে আজীবন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০১২ সালে ইন্জিনিয়ারিং কোচিং করার সময়ও জানতাম না যে আমি একজন কৃষিবিদ হতে চলেছি, কিন্তু আজ আমি একজন গর্বিত কৃষিবিদ। তাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, রিযিকের ফয়সালা আসমানে হয়। উপজেলা মৎস্য অফিসার হিসেবে কাজ করে আমার মনে হয়েছে, জনগণের সাথে তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করার মত আনন্দের কিছু আর হতে পারে না। সকলের সাথে মিশে কাজ করার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, আজ সেটি পূরণ হয়েছে। সামনে যে মহৎ দায়িত্ব আসছে, সেখানে কার্যক্ষেত্র ও পরিসর বিবেচনায় আরও ভালো ভাবে দেশমাতৃকার সেবা করার সুযোগ রয়েছে। একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে পালন ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে চাই।

বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ….

সর্বপ্রথম নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরী এইভেবে যে, জীবনকে আপনি একগুণ দিলে জীবন সেটা কয়েকগুণ করে ফেরত দিতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। পজিটিভ পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। এটা জানা কথা, তবে এক্ষেত্রে সেটা হতে হবে কৌশলগত। সঠিক ও কার্যকর বই নির্বাচনের পাশাপাশি কোন বিষয়ের কোন অংশটুকু পড়বেন তার চেয়ে কোন অংশটুকু পড়বেন না, সেটা জানাই বেশী গুরত্বপূর্ণ। বিপিএসসি এখন মেধাবী, ধৈর্যশীল, পরিশ্রমীদের পাশাপাশি সৃজনশীল ও বিচক্ষণ প্রার্থী বাছাইয়ে বেশী মনোযোগী। অনার্সের শুরু থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত থাকতে পারেন, নিজের ইংলিশ স্পিকিং এ্যাবিলিটিকে আরও শাণিত করতে পারেন, ভালো ক্যাডার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটা আবশ্যক। এখন আধুনিক সময়, নিজের মুঠোফোনটাকে বিসিএস প্রস্তুতিতে কাজে লাগান, ফেসবুক ,ইউটিউবের পাশাপাশি আপনার স্কিল ডেপলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন সাইট, ফেসবুক পেজ, এ্যাপস ব্যাবহার করতে পারেন। নিজের দূর্বল দিকগুলো নিয়ে কাজ করুন, সিলেবাস বুঝে কার্যকর গ্রুপস্টাডি করুন, সিনিয়রদের পরামর্শ নিন, নিজের প্রাত্যাহিক পড়াশোনাটুকু ডেডিকেটেডলি নিজস্ব রুটিন মাফিক শেষ করুন এবং প্রচুর পরীক্ষা দিন, ভালো করতে হলে পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই সত্যিই। নিজেকে গড়ে তোলার জন্য যতটুকু সময় পেয়েছেন তার সদ্ব্যবহার করুন, সময় তার উত্তম প্রতিদান দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।

আপনার সম্ভাব্য পরিশ্রম শেষে ফলাফলের জন্য একটা কথায় বিশ্বাস রাখবেন, “মানুষ সবকিছু বদলাতে পারে, শুধু বদলাতে পারে না তার নিয়তি”, দিনশেষে নিয়তিতে বিশ্বাস রাখবেন, ওটা একান্তই সৃষ্টিকর্তার হাতে।

সকল বিসিএস স্বপ্নবাজদের যাত্রা শুভ হোক, এই কামনা।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.