The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪

শরতের শহরে কবিতার খোলা হাওয়া

সানজিদা আক্তার মেঘলাঃ বর্ষার নিবিড় ঘনঘটা অপসারিত হয়ে আকাশ যখন নির্মল হয়ে উঠে, নদীর কিনারে বালির চরে যখন কাশবন হেসে উঠে তখন মনে হয় এই বুঝি শরৎকাল এসে গেছে। ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে যখন শরতের যৌবন পরিলক্ষিত হয় তখন চারিদিকে শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, কাশফুল, শিউলি, বোগেনভিলিয়াসহ নানা রকমের ফুলেল হাসিতে হেসে উঠে প্রিয় ঋতু ‘শরৎ’। বিভিন্ন উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে ভিড় জমায় শরৎকাল।

শরতের স্নিগ্ধ প্রকৃতি হয় কোমল, শান্ত, টলমলে এবং উদার। ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘ, সোনা ঝরা রোদ, নদীর ধারে মৃদু মন্দ বাতাসে দোল খাওয়া সাদা সাদা কাশফুল, সাদা বক, বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ তুলে নদীতে পাল তুলে চলা নৌকা, মায়াবী রাত, মোহনীয় চাঁদ, চারপাশে শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা, বৃষ্টিশেষে হাল্কা রোদ। এ দৃশ্য শুধু শরৎকালেই ফুটে উঠে। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয় কিন্তু বর্ষার মতো অঝোর ধারায়, অবিরাম হয় না। শরতের সৌন্দর্য গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। বর্ষার পরে যখন শরৎকালের আবির্ভাব ঘটে তখন স্নিগ্ধ আকাশের মতো এমন শুভ্র, মিষ্টি আকাশ আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।

প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের বাহার দেখে শত শত কবি- সাহিত্যিকের হৃদয়ের আঙিনায় নতুন নতুন সাহিত্য কর্ম সৃষ্টি হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শরৎ তোমার কবিতায় শরৎকে যেভাবে রূপায়ন করেছেন:

“শরৎ, তােমার অরুণ আলাের অঞ্জলি।
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মােহন অঙ্গুলি।।
শরৎ, তােমার শিশির-ধােওয়া কুন্তলে
বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞলি।।”

শরতের সকাল এক অভূতপূর্ব আনন্দ ও অনুভূতি সৃষ্টি করে।প্রকৃতিতে শরৎ আসে ‘নববধূর মতো।’

গ্রীষ্মের দাবদাহ আর বর্ষাকালের অবিরাম বর্ষণের পর এই ঋতু জনজীবনে আসে ভিন্ন চেহারায়, স্বস্তি নিয়ে। শরতের প্রভাতে হাল্কা কুয়াশা আর বিন্দু বিন্দু জমে ওঠা শিশির এ ঋতুর প্রধান উপহার। হঠাৎ একদিন ভোরে যখন দেখতে পাই, শিশিরসিক্ত দূর্বাঘাসের উপর সূর্য কিরণ পড়ে হাজারো মুক্তোদানার রূপ ধারণ করেছে তখন আমাদের আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে শরৎ এসেছে। যদিও এর স্থায়িত্ব কিছুকাল তবুও প্রকৃতিতে তার ছন্দ ও সৌন্দর্যের রেশ থাকে অনেকদিন। এমন মনোরম পরিবেশ দেখে কবিমন গেয়ে ওঠে, “আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা, নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।”

শরতের শান্ত-স্নিগ্ধ রূপবৈচিত্র্য দিনের আলোয় ধরা দেয় একভাবে আর রাতে ধরা দেয় অন্যভাবে। রাতে নির্মল নীল স্বচ্ছ আকাশে চাঁদের মায়াবী মাধবী জ্যোৎস্ন্যার আলো আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না। এই ঋতুতে সবুজ প্রাণে হিল্লোলিত হয়ে ওঠে বন ও প্রকৃতি। কালের পরিক্রমায় যদিও এটি তৃতীয় ঋতু তবে এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরপুর থাকে শরৎ ঋতু। এই ঋতুর নিজস্ব একটা আনন্দময় গন্ধ আছে। শারদীয় দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা থেকে শুরু করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটানো পর্যন্ত সবই শরতের বিশেষত্ব। তাই শরতের প্রতিষ্ঠা হয়েছে উৎসব প্রিয় বাঙালির হৃদয়ের তথা অন্তরের মনিকোঠায়।

শরৎ মানেই নতুন সম্ভবনা। কৃষকের অন্তরে নতুন স্বপ্ন লালন করে শরৎ। বুকে বাঁধেন নতুন আশা। নতুন ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে নতুন সব চারা রোপন করা হয়ে থাকে এ ঋতুতে। বর্ষা ঋতুর পরপরই যেহেতু শরতের হইচই সেহেতু বর্ষার স্রোতস্বিনী শরতেও পূর্ণ হয়ে থাকে। নদীর বুকে পালতোলা নৌকা ভাসিয়ে মাঝি ভাটিয়ালি গান গেয়ে চলে মনের আনন্দে। শরতের অনুপম মাধুর্যের প্রতি মোহিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,

‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা
গেঁথেছি শেফালি মালা, নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা, এসো গো শারদলক্ষ্মী,
তোমার শুভ্র মেঘের রথে, এসো নির্মল নীলপথে।

-শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.