The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ক্যাপ্টেন হিরামকক্স থেকে যেভাবে কক্সবাজারের নামকরণ হয়

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার: ইংরেজ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামের সাথে ‘বাজার ‘ যুক্ত হয়ে এই কক্সবাজার জেলা। কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামে অবস্থিত ক্যাপ্টেন ‘হিরাম কক্স’-এর বাংলোবাড়ি। আজ থেকে ২২২ বছর আগে ইংরেজ ক্যাপ্টেন ‘হিরাম কক্স’ নির্মান করেছিলেন বাংলোটি । তখনকার সময়ে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ইট কংক্রিট ও টিনের ছাউনি দিয়ে। বর্তমানে বাংলোটি অযত্ন -অবহেলায় পড়ে আছে। বাংলোর ছাউনি পরিবর্তন ছাড়া এ পর্যন্ত ঘরের সংস্কার হয়নি। টাঙানো নেই হিরাম কক্সকে নিয়ে কোনো সাইনবোর্ড কিংবা স্মৃতিফলক।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৮৪ সালের দিকে আরাকান দখল করে নিয়েছিলেন বার্মার রাজা বোধাপায়া। রাজার আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রায় ১৩ হাজার আরাকানি এদিকে চলে আসে, আশ্রয় নেয় পালংকীতে। কক্সবাজারের প্রাচীন নাম ছিল ‘পালংকী’। সমুদ্র ও জঙ্গলঘেরা পালংকীতে আশ্রিত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে সেখানে নিয়োগ দিয়েছিল। হিরাম কক্স পালংকী এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি বাজার। প্রথম প্রথম এ বাজার ‘কক্স সাহেবের বাজার’ নামে পরিচিত ছিল। পর্যায়ক্রমে ‘কক্স-বাজার’ এবং ‘কক্সবাজার’ নামের উৎপত্তি ঘটে। আরও আগে জায়গাটি ‘প্যানোয়া’ নামেও পরিচিত ছিল । ‘প্যানোয়া’ শব্দের অর্থ ‘হলুদ ফুল’। তখন কক্সবাজার হলুদ ফুলের রাজ্যে ছেয়ে ছিল।

হিরাম কক্স তো দায়িত্ব নিয়েছিলেন শরণার্থী পুনর্বাসনের। কিন্তু তাঁকে তো রাত যাপন করতে হবে, করতে হবে দাপ্তরিক কাজ। এ জন্যই রামুতে নির্মিত হয় এই বাংলোবাড়ি। ১৭৯৯ সালে বাংলোবাড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ক্যাপ্টেন কক্সের মৃত্যু হয়। তাঁর মরদেহ নেওয়ার জন্য চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বড়খালে জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন কক্স সাহেবের স্ত্রী ম্যাডাম কক্স পিয়ার। ‘ম্যাডাম কক্স পিয়ার’ লোকমুখে হয়ে যায় ‘মেধাকচ্ছপিয়া’। এখন মেধাকচ্ছপিয়া দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান।

কক্সবাজার শহর থেকে রামুর ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাংলোবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বদিউজ্জামান( ৫৬) নামে এক বৃদ্ধ এই বাংলো পাহারা দিচ্ছেন।

বাংলো পাহারাদার বদিউজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই বাড়িটি ২২২ বছর আগে তৈরি করেছিলেন ইংরেজ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স। যার নামে এখন এই কক্সবাজার জেলা। এই বাড়ির সাথে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক ঘটনার সংযোগ আছে, তবে সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো স্মৃতিফলক নেই। এবাংলোটি ‘জেলা পরিষদ বাংলো’ নামেও অধিক পরিচিত।

বদিউজ্জামান আরও জানান, দুই ঘরের এই বাংলোতে আছে ব্রিটিশ আমলের একটি খাট, চেয়ার-টেবিল। এই বাংলোয় কেউ রাত যাপন করতে চাইলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি রাতের জন্য ২০০ টাকা, পর্যটকদের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম এর সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ২২২ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাংলোটি অযত্ন- অবহেলায় পড়ে আছে। বাংলোর ছাউনি পরিবর্তন ছাড়া এ পর্যন্ত ঘরের সংস্কার হয়নি। টাঙানো নেই হিরাম কক্সকে নিয়ে কোনো সাইনবোর্ড কিংবা স্মৃতিফলক। বাংলোটি ‘হিরাম কক্স এর বাংলোবাড়ি’ হিসেবে খ্যাত হলে রামুর পর্যটনে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী জানান, যার নামে আজকের এই কক্সবাজারের নামকরণ সেই ইংরেজ ক্যাপটেন হিরাম কক্স এই বাংলোতে থাকতেন । বাংলোটি অনেক বছরের পুরনো। এটির দেখবাল জেলা পরিষদ থেকে করা হয়। সম্প্রতি বাংলোর বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কারসহ বাংলোর ভিতর একটি টয়লেট ও খাট – সোফা সংযুক্ত করা হয়েছে ।
এই বাংলোর ঐতিহ্য ও ইতিহাস ধরে রাখতে এবং পর্যটক আকর্ষণে আরও কিছু সাজসজ্জার প্রয়োজন আছে। ক্রমান্বয়ে এসব কাজ করা হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.