The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

কার্যক্রমহীন সংগঠন, থেকেও নেই জবির ফটোগ্রাফিক সোসাইটি

সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: কয়েকবছর আগেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জাতীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করে শীর্ষস্থান দখল ছিল নিয়মিত ব্যাপার। এখন ভাটা পড়েছে সেই ধারাবাহিকতায়। সংগঠনের নামে বরাদ্দকৃত কক্ষ দখল করে মাদকসেবন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে অনুদান নেওয়া ছাড়া কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়ে না সেসব সংগঠনের। করোনা পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির নাম। বছরব্যাপী কোনো কার্যক্রম তো পরের কথা শনিবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ব ফটোগ্রাফিক দিবসেও ছিল না তাদের কোনো কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১১ এপ্রিল নিয়াজ মাহমুদ সজিব কে সভাপতি এবং সাদিয়া ইসলাম ইফতি কে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফটগ্রাফিক সোসাইটির ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি অনুমোদনের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সংগঠনটির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ছোট্ট ক্যাম্পাসের জায়গা সংকটের মধ্যেও অবকাশ ভবনে সংগঠনের নামে কক্ষ বরাদ্দ নিলেও নেই সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম। অনেক ক্রিয়াশীল সংগঠন যেখানে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়েও সংকটের কারণে অফিসের জন্য জায়গা বরাদ্দ পাচ্ছেনা সেখানে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির নামে কক্ষ বরাদ্দ নিয়েও তা বন্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। শুধু ফটোগ্রাফিক সোসাইটি নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকটি সংগঠনও চলছে এমন অবস্থায়।

অভিযোগ উঠেছে, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের কার্যক্রম না থাকলেও বিভিন্ম সময়ে বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহার করা হয় মাদকসেবনের কাজে। সংগঠনের নাম থাকলেও যেমন নেই কোনো কার্যক্রম। তেমনই নবীন শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পাচ্ছেন না সাংগঠনিক চর্চা করার। সংগঠনের কার্যক্রম না থাকায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরাও সুযোগ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন ‘আমি কলেজ থেকেই ফটোগ্রাফি করে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শুনেছি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি আছে। সেখানে আমি সদস্য হওয়ার জন্য অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু একাধিকবার গিয়েও আমি অফিস বন্ধ পেয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কাজ হচ্ছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সার্বিক অবস্থাকে তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু সেখানে যদি স্থবিরতা চলে আসে তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু পড়াশোনা নয় বরং সংস্কৃতি বিকাশেরও জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক চর্চার নির্দেশনা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ নিয়েও তা করছেনা ফটোগ্রাফিক সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

তবে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দাবি, সংগঠনের কাজ ঠিকভাবেই চলছে। কোনো কার্যক্রম না চোখে না পড়লেও অনলাইনে আড্ডা দেওয়ার মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান তারা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বাজেট ঘাটতির কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি তাদের। সার্বিক কার্যক্রমকে অধিক ত্বরান্বিত করতে আরো বেশি পরিমাণে বাজেট দেওয়ার দাবিও জানান তারা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সংগঠন ভিত্তিক পর্যাপ্ত বাজেট দেয়া আছে। এখন আর নতুন করে বাজেট বাড়ানো হবে না বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।

বিশ্ব ফটোগ্রাফিক দিবসেও কোনো কার্যক্রম না থাকার কারণ জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া ইসরাম ইফতি বলেন, ‘ আজ (১৯ আগস আমাদের কোনো প্রোগ্রাম ছিল না, কারণ অনেকেরই পরীক্ষা চলছে। আর সম্প্রতি আমরা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে আড্ডা দিয়েছিলাম।’

এর আগেও এই সংগঠনের কার্যক্রম না থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি নিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম ঠিকভাবেই চলছে৷ আমরা নতুন সদস্য সংগ্রহে রিক্রুটমেন্ট করেছি। সামনে একটা আন্তঃবিভাগ ফটোসেশান প্রোগ্রাম করবো।’

সর্বশেষ কি কার্যক্রম হয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ফটোসেশন করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনে আমরা পার্টনার হিসেবে থাকি৷’

এবিষয়ে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে ওদেরকে (প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি) বার বার কল দিয়ে বলতাম যে; কর্মঘণ্টা ঠিক করার জন্য, কার্যক্রম বৃদ্ধি করে মেম্বার আরও বাড়ানোর জন্য। কেউ যদি শুধু পোস্ট পদবির জন্য সংগঠন করে তাহলে তো আর কিছু বলার নেই। আমি প্রতিনিয়তই ওদের সাথে কন্টাক্ট করছি কার্যক্রম গতিবিধি বাড়ানোর জন্য।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। খুব দ্রুতই আমরা সংগঠনগুলোর কাছে গঠনতন্ত্র চাইবো। তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবো। যাদের কার্যক্রম নেই সেগুলো বিবেচনা করা হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কক্ষ বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.