সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বেড়ে চলেছে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি। অপরিচ্ছন্ম ক্যাম্পাস আর নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পানি জমে পুরো ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে এডিস মশা আর ডেঙ্গুর হটস্পট। বিভিন্ন স্থানের জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করার ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিতই শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও এখনও মশা নিধনে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের দিনে একবার ফগার মেশিনে দিনে মশার ওষুধ ছিটিয়েই দায় সারছে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের নাজেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থায় জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিস মশা। নতুন একাডেমিক ভবনের পেছনে, প্রশাসনিক ভবনের পাশের ড্রেনে, বিজ্ঞান অনুষদ ও ডরমিটরির রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোতে পানি জমে থাকায় সেখানে মশা জন্মাচ্ছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানের ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্যে বৃষ্টির পানি জমে থাকছে। কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন স্থানেও দেখা যায় জমে থাকা পানি। বোটানিক্যাল গার্ডেনের ড্রেন ও এর পাশে জমে থাকা আবর্জনা এবং মুজিব মঞ্চের পিছনেও জমে রয়েছে পানি। এসব স্থানে জমে থাকা পানিতে সহজেই বংশবৃদ্ধি করছে এডিস মশা। আর তা পরিণত হচ্ছে মশার আতুড়ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এ পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি থাকলেও নিয়মিত কার্যক্রম না থাকায় তা কাজে আসছেনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ২৫০-২৮০ জনের মতো শিক্ষার্থীমেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে আসছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০০-২৫০ জনেরই ডেঙ্গু উপসর্গ থাকছে। এদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু পজেটিভ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ আগস্ট নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র চন্দ্র সরকার মারা যান। এছাড়াও প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ছাত্রীহল ও আশপাশের মেসেও। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে উঠছেন আবার কেউ কেউ সুমনা, ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই এখনও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত থাকায় চলমান ক্লাস-পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মশা বংশবৃদ্ধির সুযোগ পেলেও প্রশাসন তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দিনে একবার করে মশার ওষুধ ছিটানো হলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই এত মশার উপদ্রব হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নিয়মিত ডাস্টবিন ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরা বলেন, বর্তমান হালকা বৃষ্টি হচ্ছে আর এতে মশাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনও তো ক্লাসের মধ্যেও মশা কামড়ায়। মশার যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে বসে থাকাও দায়।
গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী চয়ন কৃষ্ণ বলেন, ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা টা জরুরী। ক্যাম্পাস এখন মশাদের দখলে চলে গেছে। আমাদের নিজেদের সচেতন থাকার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টিও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন মশা বংশবৃদ্ধি ঘটাতে না পারে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত আরা মজুমদার বলেন, বাইরে ডেঙ্গু টেস্ট করালে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসেই শিক্ষার্থীরা ফ্রি তে টেস্ট করাতে পারছে। আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারেও এমন ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, জ্বর নিয়ে অনেকেই আসছেন। তাদেরকে ডেঙ্গু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু পজেটিভ হয় কিন্তু পরবর্তীতে মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসে না বলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের কেয়ারটেকার শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংকট আছে। হল উদ্বোধনের পর যে কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের স্থানে নতুন নিয়োগ হয়নি। কর্মী সংকটের পাশাপাশি ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনগুলোর ভেতর দিয়ে গ্যাস ও পানির লাইন নিয়ে পরিষ্কার করার ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবুও আমরা নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করি।
ড্রেন সংস্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ড্রেন পরিষ্কার করার কাজ পরিচ্ছন্নতা কমিটির। ড্রেন পরিচ্ছন্নতা কমিটি ও কেয়ারটেকার শাখার কাজ ড্রেন পরিষ্কার করা। ক্যাম্পাসের দেয়াল ঘেঁষা ড্রেনগুলো ঢেকে অনেক কর্মচারীরাই বসবাস করছেন। এজন্য সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহবায়ক এবং ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, সারা বাংলাদেশে ডেঙ্গুর অবস্থা এখন অনেক খারাপ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে নয়, আমরা সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলে আগে যে হারে ডেঙ্গু লার্ভা ধ্বংস করার জন্য ওষুধ দেয়া হতো তার চেয়ে বেশি হারে যেন ওষুধ ছেটানো হয় সেই কথা বলেছি।
পরিচ্ছন্নতা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামাল হোসেন সরকার বলেন, সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ক্যাম্পাসে মশার লার্ভার ওষুধ দিচ্ছি এবং ধোঁয়া স্প্রে করছি। এছাড়া ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে।