বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নারকীয়ভাবে হত্যাকান্ডের সঙ্গে যে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ছিল তাদেরকে অতিসত্বর বিচারের মুখোমুখি করার জোরালো দাবি তুলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে সেই হত্যাকারীদের জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার ধীরে ধীরে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছেন। তাদের অনেকের শাস্তি হয়েছে, অনেকে পলাতক অবস্থায় রয়েছে। আমরা আশা করি তারা ধরা পড়বে। বাংলাদেশে তাদের ফেরত আনা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন শুধু তাদের বিচারের আওতায় আনলে হবে না; যারা চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেই চক্রান্তকারীদের আজকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন হলে মরণোত্তর বিচার করতে হবে।”
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “যদি সেটি না করা হয় তাহলে চক্রান্তের রাজনীতি থামানো যাবে না। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র সে ষড়যন্ত্র থামানো যাবে না। একারণে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে যে চক্রান্ত হয়েছিল সেই চক্রান্তকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
উপাচার্য আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তি মাত্র নন। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে আদর্শ, বঙ্গবন্ধু মানে ধ্রুব তারকা, বঙ্গবন্ধু মানে এমন এক বাংলাদেশ যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়িয়ে। তিনি আজীবন বাঙালির জন্য সংগ্রাম করেছেন, বাঙালির আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন। এই মানুষটিকে হত্যার মধ্যদিয়ে একাত্তর সালের পরাজিত শক্তি ভেবেছিলো যে একাত্তর সনের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া বোধকরি সম্ভব। তাই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। হত্যা করবার আগে তারা চক্রান্ত করেছিল। চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিল সামরিক বাহিনীর কিছু লোক, বেসামরিক বাহিনীর লোক, আধা সামরিক বাহিনীর কিছু লোক। সুদীর্ঘ চক্রান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকে তারা হত্যা করেছিল। তাঁর স্ত্রী, শিশু সন্তান রাসেলসহ আরও অনেককেই তারা হত্যা করে। কিন্তু পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যে সামরিক শাসকের পত্তন ঘটেছিল বাংলায় সেই সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবার জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ও রক্তের উত্তরাধিকারী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বাঙালির ঝান্ডা তুলে ধরলেন এবং বাঙালির সামনে পথ দেখালেন। বঙালির গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হলো। সেই অভিযাত্রায় ধীরে ধীরে বাঙালি আজকে উন্নত বিশ্বের দোঁড়গোরায় গিয়ে পৌঁছানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েছে।”
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করা হয়। সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো ব্যাজ ধারণের মধ্যে দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সাথে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। এরপরে একটি শোক পদযাত্রা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য’-এ গিয়ে শেষ হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে সেখানে ভাস্কর্যের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। পরে নবনিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হালিম, প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিমসহ অন্যরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম হাওলাদার, সদস্য সচিব নুসরাত শারমিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, বঙ্গবন্ধু-নীলদলের সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম আল মামুন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হালিম, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অন্যরা।