নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুর্যালের সামনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সহিদা আখতার, মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান, উপস্থিত ছিলেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এছাড়াও বিভাগটির শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে তরুণ কলাম লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু তালহা আকাশ বলেন, নওরীন দাবি আদায়ে সোচ্চার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সদা তৎপর ছিলেন। আত্মহত্যা নিয়ে লেখালেখি করতেন, সেরা লেখক সম্মাননা পেয়েছেন। শুধু লেখালেখিই নয় বিতার্কিক ও সাংস্কৃতিক মঞ্চে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো। আজ এরকম একটি মানববন্ধনে তার অংশগ্রহণ একান্ত ছিলো, কিন্তু আজ দুঃখের বিষয় তার জন্যেই আজ এই মানববন্ধন করতে হচ্ছে।
মানববন্ধনে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, নওরীন নুসরাত এভাবে আত্মহত্যা করতে পারেনা। এর পিছনে কোন রহস্য রয়েছে। যে মেয়েটি আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তার দ্বারা এ ধরনের কাজ হওয়া সম্ভব নয়। মেয়েটি ছিল প্রতিবাদ মুখর একটি মেয়ে। তার সবকিছুতেই স্ট্রং ও রুচিশীল ও প্রগতিশীল চিন্ত সবকিছুই তার মধ্যে ছিলো।
তিনি আরো বলেন, মাত্র ১৬ দিন আগে বিয়ে হওয়া একটি মেয়ের কি এমন হলো যে, তাকে ঘরে আটকে রাখা হলো। বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলো। এমনকি বাবা মা জামাইকে ফোন দিয়ে তার বাসায় মেয়ের কাছে যেতে চাইলে ৬টার পর আসতে বলা হলো। এগুলো কোন না কোন রহস্যের অংশ। এইসব রহস্যের উন্মোচন করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বিভাগটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সহিদা আখতার বলেন, মৃত্যুর ২ দিন আগে তার সাথে কথা হয়েছিলো। নওরীনকে আমি সব জায়গায় অনুপস্থিত পাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার মা ফোন দিয়ে বললো নওরীন নেই। আমি দেখেছি সে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো। সেই মেয়ে এভাবে চলে যাবে তা অবিশ্বাস্য। তার বিষয়ে খবর পেয়েছি তা অত্যান্ত ভয়ংকর। সে অসুস্থ ছিলো তাকে সকল ধরণের ওষুধ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি৷ তাকে ঘরবন্ধ করে রাখা হয়। এমনকি ইন্টারনেট কানেকশনও ছিলো বিচ্ছিন্ন। বাইরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছিলো। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, হুমকি দেয়া হয়েছে। কেনো তাকে এ কাজ করতে বাধ্য করা হলো। যারা আমার মেয়েকে এরকম করতে বাধ্য করেছে তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তাকে দমিয়ে দেয়া হয়েছে, আজ যদি এর বিচার করা না হয় তাহলে আর কোনো নওরীন আসবে না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) বিকেলে সাভারের আশুলিয়ায় পলাশবাড়ী নামাবাজারের একটি ভাড়া বাসার ছয়তলা থেকে পড়ে নওরীনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। নওরীন তার স্বামী ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে সেখানে থাকতেন। মাত্র ১৮ দিন আগে তাদের বিয়ে হয়। তবে এ মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে বলে অভিযোগ নওরীনের বাবার। তিনি অভিযোগ করেন তার মেয়েকে হত্যা বা আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।