বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সমাবর্তনের আয়োজন করার চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর সেটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই সমাবর্তনটি অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। আর বহুল প্রতীক্ষিত এই সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন শাকিল বাবু।
সমাবর্তনের দিনটি আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের জীবনের সেরা অধ্যায়
সমাবর্তন হলো শিক্ষা জীবনের অর্জনের স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিন যা ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে সকলে একসাথে মিলিত হয়ে উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন, সেই সাথে দেশ বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ আমন্ত্রিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সমাবর্তন অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষা জীবন শেষ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছি। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার স্বীকৃতিও পেতে যাচ্ছি। নিজের শিক্ষার্থীদের সাথে একই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে দারুণ আনন্দের হবে আমার জন্য। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব, ছোট বড় ভাই বোন সকলের সাথে পুনর্মিলনীর একটা সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যাবে এই সমাবর্তনে। মাননীয় উপাচার্য স্যারকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের অতি আকাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয়ার জন্য। সকলে মিলে অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে যেন সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারি এটাই আমাদের চাওয়া। সমাবর্তনের দিনটি আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের জীবনের সেরা অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। বিশেষভাবে বলতে চাই এই গৌরব ও সম্মানের অনুষ্ঠান হোক সকল গ্র্যাজুয়েটদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমুলক। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর ও সফল দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।
– আফরোজা ইসলাম লিপি, সহকারী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
২য় সমাবর্তন’ আমার কাছেও একটি প্রতীক্ষিত বিষয়
‘সমাবর্তন’ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রীধারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনদ লাভ করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড়যুগ পেরিয়ে গেলেও, কেবলমাত্র একটি সমাবর্তন পেয়েছে শিক্ষার্থীরা যেটির আয়োজন করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমান শিক্ষক হিসেবে ‘২য় সমাবর্তন’ আমার কাছেও একটি প্রতীক্ষিত বিষয়!আক্ষরিক অর্থে সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা হলেও, প্রকৃতঅর্থে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরাই সম্মানিত এবং উপকৃত হন! যদিও সমাবর্তনে কেবল ডিগ্রীধারীরাই সনদ এবং কেউ কেউ ক্ষেত্রবিশেষে ভালো ফলাফলের জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়ে থাকেন, তবে সমাবর্তনে বর্তমান, সাবেক, সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবীদের মাঝে এক বিশাল মিলন মেলা সংগঠিত হয়। এতে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্রিজিং নেটওয়ার্ক আরও মজবুত হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেকার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়। পাশাপাশি সমগ্র দেশ এবং দেশের বাহিরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং এবং পরিচিতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিপায়। আমি মনে করি ২য় সমাবর্তনের আয়োজনে তুলনামূলকভাবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের প্রাণের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
– তানজিল আহমেদ, প্রভাষক, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক
একজন শিক্ষার্থীর কাছে সমাবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বপ্নের সমান। মূলত শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের শুরু এবং শেষ করার পর অপেক্ষা করে একটি সমাবর্তনের জন্য। যেখানে তার সঙ্গে তার পরিবারের মানুষদেরও একটি আকাঙ্ক্ষার জায়গা থাকে। এটি যেহেতু শিক্ষাজীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এটি বর্নিলভাবে সাজানো উচিত। সমাবর্তন থেকে যেন শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষা নিয়ে যায়। শুধু আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমাবর্তন যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। এর জন্য অতিথি নির্বাচন থেকে শুরু করে সমাবর্তনে প্রধান বক্তা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানুষগুলো যেন সেই বক্তা এবং অতিথির জায়গায় থাকে। এমন কেউ অতিথি হওয়াটা জরুরী নয় যে, যার কাছ থেকে কিছু শিক্ষা না পাওয়া যায়। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা দরকার যেখানে সকল কিছু সুন্দর ও সুশৃঙ্খল থাকবে। সেইসঙ্গে অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক যে প্রতিবন্ধকতা অনেক সময় আমরা শুনতে পাই। সেটি যেন না থাকে ও যেন শিক্ষার্থী বান্ধব একটি মূল্য নির্ধারণ করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব।
– নিহার সরকার অংকুর, সাবেক শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।