নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে এক ছাত্রকে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত রোববার প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্র। পরে প্রশাসনের কাছে করা অভিযোগ পরদিনই প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সেই ছাত্র।
বুধবার (২১ জুন) দিনের শুরুতেই ছাত্র-উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর নতুন করে আরেকটি আবেদন করেন ভুক্তভোগী। এতে বিষয়টি সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ডেকে কথা বলার পর এবং পরবর্তীতে ঝামেলায় না জড়াতে অভিযোগ তুলে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা প্রত্যাহারের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই ছাত্র বলেন, ‘মঙ্গলবার (২০ জুন) অভিযোগ দেওয়ার পর সন্ধ্যার আগে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় ভাইসহ সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে ডাকেন। পরে তারা আমার সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করে দেন। যেহেতু আমাকে আরো চার-পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে থাকতে হবে। পরবর্তীতে এটা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। আমি চাই না এটা নিয়ে বেশি কিছু হোক। এজন্য অভিযোগপত্রটি আমি উইথড্র করে নিয়েছি।’ তবে এসময় অভিযুক্তদের কেউ সেখানে ছিল না বলে জানান তিনি।
এদিকে, নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী ছাত্র মেসে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। বুধবার বিভাগের পরীক্ষা থাকায় সকালেই প্রত্যাহারের আবেদন করে পরীক্ষায় বসেন। দুপুর দুইটায় প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার যৌথসভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত না হয়ে পরীক্ষা শেষ করেই বাড়ি চলে যান বলে জানা গেছে।
ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, অভিযোগের বিষয় নিয়ে আমরা দুপুরে তাদের বক্তব্যের জন্য ডেকেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী কেউ আসেননি। যেহেতু র্যাগিংয়ের অভিযোগ এসেছে প্রত্যাহার করলেও আমরা বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। আজ বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হওয়ায় ছুটি পর আমরা তাদের নিয়ে বসব।
প্রক্টর ও অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিলেন্স কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ভুক্তভোগী অভিযোগ প্রত্যাহার করলেও আমরা যেহেতু র্যাগিংয়ের বিষয়টি জানতে পেরেছি এজন্য অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। ঈদের পর আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব। অভিযোগ দিয়ে কেন প্রত্যাহার করা হলো এই বিষয়ও আমরা জানার চেষ্টা করব। কেউ অভিযোগ করুক বা না করুক র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা গতকাল বিকেলে ওর সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করে দিয়েছি। সে একবারেই নবীন, এজন্য অনিরাপদ বোধ করে অভিযোগপত্রটি দিয়েছিল। পরে আমরা তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত রোববার হলের গণরুমে ভুক্তভোগী ছাত্রকে র্যাগিং ও দফায় দফায় নির্যাতনের ঘটে। সেদিনই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উভয় পক্ষকে তার কক্ষে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে মঙ্গলবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্র। এরপর থেকে ভুক্তভোগীকে অভিযোগ প্রত্যাহার করাতে ফের তৎপর হতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।