জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে দেখা মিলছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ খাবার, পোশাক ও কসমেটিকস এর দোকান। যত্রতত্র গরে তুলা এসব দোকানগুলোর অধিকাংশেরই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই, এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় রবিবার (১৮ জুন) সকাল ৯ টায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ)’র পরীক্ষার মাধ্যমে। মোট ৫ দিনব্যাপী চলমান এই ভর্তিযুদ্ধে ১ হাজার ৮৪৪টি আসনের বিপরীতে মোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৭টি আবেদন জমা পড়েছে। সে হিসাবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ১৩৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে আসা এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জমায়েতকে কেন্দ্র অতিরিক্ত মুনাফা ভাগিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে, টিএসসি প্রাঙ্গন, বটতলা ও বিভিন্ন হলের আশেপাশে গরে ওঠেছে খাবার,পানীয়,শাড়ি – চুড়ি,কসমেটিকসসহ বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান। বিশ্ববদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এমন প্রায় তিন শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে।
যত্রতত্র এসব দোকানগুলোতে স্বাভাবিক থেকে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি দাম হাকিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে অধিকাংশ দোকনের মালিকগণ নেয়নি কোনো লিখিত অনুমোদন।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়াও এসব দোকানগুলোর ফলে এই বিপুলসংখ্যক অভিভাবকদের বসার জায়গার সংকট, হাঁটতে সমস্যা, কেন্দ্র খুঁজে পেতে সমস্যা, খাবার ও অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় বর্জ্যে ক্যাম্পাসে দু্র্গন্ধ ও মশার উৎপত্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোতে বয়লার মুরগী ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০-৭০ টাকা, মাছের দাম ৩০-৪০ টাকা থেকে ৬০-৮০ টাকা, টার্কি মুরগী ১২০-১৫০ টাকা, হাঁসের মাংস ১০০-১২০ টাকা থেকে ১৫০ – ১৮০ টাকা গরুর গোশত প্লেট প্রতি ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাড়তে দাম হাকিয়ে নিচ্ছে পিজ্জা,পাস্তা,বার্গার,জুশসহ বিভিন্ন আইটেমে। অপরদিকে খাবারের দোকানের পাশেই বসছে নানা রকমের রকমারি কসমেটিক্স, চুড়ি ও শাড়ির দোকান। যাতে সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ীরা হাকিয়ে নিচ্ছেন অধিক মুনাফা।
জামালপুর থেকে আসা এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরছে। পাশাপাশি এই অস্থায়ী দোকানগুলোর ভীড়ের কারণে আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছি না। এছাড়া এজন্য বসার জন্য কোনো জায়গাও পাচ্ছিনা ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
ঢাকা থেকে আগত অন্য এক অভিভাবক ইমন ইসলাম বলেন, ‘এখানকার ভ্রাম্যমাণ দোকানে খাবারের মূল্য আমার কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলো। আরেকটু কম মূল্য রাখলে এবং খাদ্য তালিকা থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, খাবারের দোকানের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের আওতাধীন৷ এস্টেট অফিস এসব খাবারের মান ও দামের বিষয়টি তদারকি করছে৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মোট ১৩৮ টি দোকানের অনুমতি দিয়েছি৷ এর বাইরে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টরা অনেকগুলো খাবার দোকান দিয়েছে৷ আমরা সমাজবিজ্ঞানের পাশের খাবারের দোকানগুলো তুলে দিয়েছি৷ এরপর আবার এসে বসেছে৷ আমরা আজ বিকালে আবার অভিযানে বের হবো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা বলেন, আমরা শুধুমাত্র ক্যাফেটেরিয়ার সামনের দু’টি দোকানকে অনুমতি দিয়েছি। অন্য দোকানগুলো শিক্ষার্থীরাই দিয়েছে। এখন এদেরকে জোর করে তুলে দেয়াও যায় না। তবে আমরা দোকানগুলো তুলে দেয়ার চেষ্টা করছি।