বেরোবি প্রতিনিধি: তীব্র রোদ্র, প্রচন্ড তাপদাহ। একটু শীতলছায়ায় পরশ পেতে উৎগ্রীব হাজারো মানুষ। গ্রাম কিংবা শহরে শুধু নয়, সর্বত্ত এ দৃশ্য বিরাজমান । গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে প্রকৃতি যখন পুড়ছে তখন উত্তরের আলোকবর্তিকা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি ) সেজেছে উলুফুলের শুভ্রতায়। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ হার মেনেছে সাদার ক্যানভাসে। তীব্র রোদ্রের আলো নয়, চোখধাঁধাচ্ছে উলুফুল।
গ্রাম ও শহরের মিশ্র পরিবেশে তৈরি সবুজে ঘেরা ৭৫ একরের ক্যাম্পাস কাঁপছে শুভ্র উজ্জ্বলতায়। যেন মনে হচ্ছে কঠোর তাপদাহে ঝলসে গেছে বেরোবির বুক। সবুজের সমারোহ, বৃক্ষের চাদরে যেটুকু টিকে আছে, তার মধ্যে লুকিয়ে আছে নানান রঙের ফুল। ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু এর সৌন্দর্য হৃদয় ছেয়ে যাচ্ছে হাজারো শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। পর্যটক বা সৌন্দর্য বিলাসী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতেছে উলু ফুল বা ঘাসফুল ।
উলুফুলের মন মাতানো সৌন্দর্য নিঙ্গরে পড়তেছে বেরোবি শিক্ষার্থীদের প্রাণে। এ যেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উলুফুলের মুক্তা ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই মুক্তা মোবাইল বা ক্যামেরা বন্দীর মাধ্যমে নিজের ঝুলিতে কুড়িয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের সাদায় মায়ায় প্রকৃতি যেন নেমেছে শুদ্ধতার অভিযানে। তাইতো, ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাণে লাগে পবিত্রতার ছোঁয়া। বাতাসে যখন উলুফুলগুলো দুলে তখন মনে হয় হাসছে ক্যাম্পাস, প্রকৃতি আর হৃদয়ের গহীন কোণ। শুভ্র সেই হাসিতে যেন মুক্তা ছড়াচ্ছে আকাশ, বাতাস, প্রাণের ক্যাম্পাস।
বছরের ছয়টি ঋতুতেই ফুলে ফুলে সুশোভিত থাকে উত্তরের এ বিদ্যাপীঠ। প্রকৃতির পালাবদলে রং-বেরঙের এসব ফুল দ্যুতি ছড়ায় প্রতিটি দিনই। হৃদয়কাড়া এ সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় আর স্নিগ্ধতায় ভরে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, খেলার মাঠ, বিভিন্ন চত্বর। শুরুতেই গ্রীষ্মের তাপ হার মানে উষ্ণ অভ্যর্থনায়। বিভিন্ন চত্বর ও গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলোর আশপাশে লাগানো হরেক রকমের ফুল মন মাতিয়ে রাখে প্রতিটি প্রাণকেই। তবে শুভ্রতায় শোভিত করে ওই উলুফুলই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং খেলার মাঠের পশ্চিম অংশ পুরোটা জায়গা সাদায় মাতিয়ে রেখেছে উলুফুল। অযত্নে থাকা ফুলগুলো যেন আপন মনে গড়ে নিয়েছে নিজের সাম্রাজ্য। বেলা-অবেলায় মৃদু কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় সেই ফুল যখন দোল খায়। সামনে থেকে দেখতে মনে হয় এক সাদা সমুদ্রের ঢেউ বয়ে চলেছে। প্রায় শত শতাংশের মাঠটি হয়ে উঠেছে আরেক দর্শনীয় স্থান। ফুল নিয়ে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ পাশে বসে আড্ডাও দেন দলবেঁধে ।কেউ শুয়ে ছবি তুলায় ব্যাস্ত কেউ বা বসে সারি হয়ে। তবে ফুল মাড়ান না কেউই।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবা লোপা বলেন, ঘাসের চাদরে শুয়ে, হাতে উলুফুল বা ঘাস ফুল নিয়ে শুয়ে থাকাটাও যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটা। ঘাস ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে মৌ-মাছিও আকৃষ্ট হয়।কারন মৌমাছির কাছে সব ফুলেই সমান।যদি তুমি তোমার কষ্টে ভরা মনকে ভালো করতে চাও তবে ঘাস ফুলের মাঝে চলে যাও।ঘাস ফুল মানে অপরূপ সৌন্দর্যে এক বিকেল।
লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী জুয়েলকে হক বলেন,প্রকৃতির অপরুপ চিত্র যেন এক মহান শিল্পীর তুলিতে আকা বর্ষার আগমনী গানের সাথে যেন তাল, সুর, লয় মিলিয়ে প্রকৃতি কে জানান দিচ্ছে বেরোবির সাদা কাশফুল।ক্যাম্পাসের ছাত্র ছাত্রী ও বাহিরের যারায় ঘুরতে আসে সবাই যেন সাদা কাশফুলের মায়ায় পরে কাশফুলকে বরন করে নিচ্ছে।সবার চাহনি যেন এই অপরুপ প্রকৃতির সুন্দর সাদা কাশফুল কে ঘিরে।
উলুফুল বা ঘাসের ফুল দেখতে কাশফুলের মতো, তবে আকারে অনেক ছোট। ঘাসগুলো ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতাগুলো গাছের গোড়ার কাছে প্রায় ২ সেন্টিমিটার চওড়া এবং শীর্ষে একটি তীক্ষ্ণ বিন্দু পর্যন্ত সরু হয়; মার্জিনগুলো সূক্ষ্মভাবে দাঁতযুক্ত এবং ধারালো সিলিকা স্ফূটিক দ্বারা এম্বেড করা হয়। মূল শিরাটি পাতার বাকি অংশের তুলনায় হালকা রঙের এবং পাতার একপাশের কাছাকাছি থাকে। গাছের গোড়ার কাছে উপরের পৃষ্ঠটি লোমযুক্ত এবং নীচের অংশটি সাধারণত লোমহীন হয়। উলু গাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম ইম্পেরটা সিলিন্ড্রিকা। এরা বহুবর্ষজীবী প্রজাতি।
সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে পতিত জমিতে এরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ে এবং বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে। কাঠ ফাঁটা রোদের সঙ্গে উলুফুলের দুলে ওঠা আবহমান বাংলার চিরচেনা রুপ। যা হৃদয়কে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।