নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কোটি টাকার জেনারেটর ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ কিলো ভোল্ট (কেভিএ) ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সাবস্টেশনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সাবস্টেশন দুটিতে ৩০০ ও ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জেনারেটর বসানো হবে। কিন্তু সাবস্টেশন দুটির কাজ শুরুর এক বছর আগে জেনারেটর ক্রয় করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে জেনারেটর দু’টি বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটি গত ৯ই মে বিষয়টি নিয়ে একটি সভা করে। কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে খুব শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে।
এক বছর আগে ক্রয়কৃত জেনারেটর দুটি স্যাঁতসেঁতে স্থানে রাখা হয়েছে। তবে জেনারেটর দু’টি ক্রয়ে প্রকৌশল দপ্তরের অনুমতি নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১০ নভেম্বর সাবস্টেশন দু’টির কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন। কাজ শুরুর ১৩ মাসের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি শেষ করতে বলা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে কাজ শুরুর এক বছর আগেই দু’টি জেনারেটর ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রকৌশল অফিসকে অবহিত ছাড়া কোনোভাবেই জেনারেটর দুটি ক্যাম্পাসে আনা সম্ভব না। কাজ শেষ হওয়ার পর এই দুটি জেনারেটর স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হলে তা ক্ষতির কারণ হবে।
জানা গেছে, ২ কোটি ৩৭ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ টাকার জেনারেটর দুটি এক বছর ধরে টিনশেডের ভেতরে রাখা হয়েছে। জায়গাটি স্যাঁতসেঁতে হওয়ায় জেনারেটর দুটি নষ্টের আশঙ্কা করছে প্রকৌশল দপ্তর। এদিকে কাজটি বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.মো. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন ইইই বিভাগের ড. তপন কুমার জোদ্দার, ঝিনাইদহ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) আব্দুল মালেক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) এ. কে. এম শরীফ উদ্দীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী শহিদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, এই কাজটি বুঝে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে। কাজ শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে ওই কমিটি। তবে আমাকে না জানিয়েই জেনারেটর দুটি ক্যাম্পাসে আনা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী জেনারেটর দুটি বসানোর পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঠিকাদারি কোম্পানি মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট ম্যানেজার মশিউর রহমান রাসেল বলেন, এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিভাগ বিস্তারিত বলতে পারবে। এটা কবে ক্যাম্পাসে গেছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
কমিটির আহ্বায়ক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। পর্যালোচনা করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিবো। পরবর্তী করণীয় তারা গ্রহণ করবেন।