বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমায় স্বপ্নবাজ অনেক শিক্ষার্থী। বিদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে যখন কেউ স্বর্ণ পদক লাভ করেন তা সন্মান বয়ে আনে দেশের জন্য। এবার ভারতে স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিলকিস মীর।
সোমবার (৮ই মে) ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আয়োজিত ৪৫ তম সমাবর্তনে প্রাতিষ্ঠানিক স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন তিনি। শুধু স্বর্ণপদকই নয় সাথে সন্তোষ সিনহা পুরস্কার, ধ্রুবপদ বন্দ্যেপাধ্যায় মেমোরিয়াল পুরস্কার এবং নিরোদবরণ মেমোরিয়াল পুরস্কারও পেয়েছেন বিলকিস মীর।
বিলকিস মীর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগ থেকে অভিনয় নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। আর এই অভিনয়ের উপরেই স্বর্ণ পদক পেয়েছেন তিনি।
স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত বিলকিস মীর তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “প্রতিটি পুরস্কারেই আনন্দ আছে কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষে বছর কয়েক পর এই পুরস্কার পাওয়াটা আসলে অনেক বেশি আনন্দের। আমার বর্তমান কাজের এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গতি তরান্বিত হলো বলে আমি অনেক আনন্দিত।”
ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি অনবরত চলতে চাই, কাজ করতে চাই। শিক্ষকতা আমার পছন্দের একটি পেশা। শিক্ষকতা মানে বৃক্ষ রোপণ করা। কারণ এটির শেখানো বা জানানোর প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ। রোজ রোজ পরিমিত পানি ও পুষ্টিকর খাবারে যেমন চারা গাছ একসময় সুষম বৃক্ষে পরিণত হয় তেমনি একজন শিক্ষার্থীও একজন শিক্ষকের পরিচর্যায় ধীরে ধীরে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারী হয়। নিজের মেধার চর্চা ও দুর্বার ভবিষ্যৎ গড়ার উপযুক্ত একটি পেশা শিক্ষকতা। ফলে আমি এখনো আমার পছন্দের পেশার সাথে যুক্ত আছি এবং ভবিষ্যতে যেখানেই থাকি না কেন এ পেশার সাথে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই। যাতে সুস্থ চিন্তা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে চতুর্দিকে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ পায়। পাশাপাশি নাট্যকলাকে সর্বজন তো বটেই সাথে সর্ব ধর্মবিদিত করার লক্ষ্যে সর্বস্তরে নাটক নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ধরনের শিক্ষার্থী আসে তাদের মধ্যে যারা স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে; যারা পড়াশুনা ও গবেষণাকে সনদ প্রাপ্তির উর্ধ্বে ভাবেন তাদের জন্য পরামর্শ হল-প্রথমেই পরিকল্পনা করতে। শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের দায়িত্বগুলো জানতে হবে। কতটা সময় পড়াশুনা করবে, কতটা সময় বিশ্রাম করবে, কতটা সময় বিনোদনের জন্য রাখবে ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে হবে। শিক্ষা জীবনের সঠিক পরিকল্পনাই সুগঠিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে। পঠিত বিষয়ে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি অন্য আরেকটি বা দুটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তিকে আত্ম উন্নয়নে কাজে লাগানো শিখতে হবে।”
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিলকিস মীর একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ক্রিয়েটিভ টিমে কাজ করছেন এবং জাপানের অর্থায়নে একটি স্কুলে নাটক বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি তিনি নিজস্ব পড়াশুনা এবং লেখালেখিতেও মনোযোগ রাখছেন।
শাকিল বাবু/