উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষার পর অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে পাড়ি জমানোর কথা ভাবেন। হিসাব করলে দেখা যায় উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসির পরেই বিদেশে পড়তে যাবার মোক্ষম সময়। কারণ স্নাতক লেভেলে সব দেশেই স্কলারশিপ প্রাপ্তির সুযোগ বেশি থাকে।
তাছাড়া এই সময় একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশ গমন করলে নতুন দেশের সার্বিক বিষয়কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলিয়ে অন্যদের তুলনায় নিজেকে অধিক দক্ষ করে গড়ে তোলার সুযোগ পান। তাছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা একজন শিক্ষার্থীকে অন্য দশজন থেকে আলাদা করে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সর্বপরি বিদেশ থাকার অভিজ্ঞতা একজন ছাত্রের সামগ্রীক ব্যক্তি জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষার পর যারা বিদেশে স্নাতক করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। কিন্তু আপনার যদি অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে এইচএসসির পরেই আপনার এই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। সেক্ষেত্রে স্নাতক করতে যাওয়ার অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস পূর্বেই পরিকল্পনা শরু করতে হবে। কারণ এইচএসসির পরে দেশের বাহিরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক ধরণের ডকুমেন্ট রেডি করার প্রয়োজন পড়বে। ডকুমেন্টগুলো আবার একেক দেশের জন্য একেক ধরনের হয়ে থাকে। আপনি যদি একাধিক দেশের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে সময় নিয়ে বুঝে বুঝে তা করতে হবে।
এইচএসসি পাস করা অনেক ছাত্র এই বিষয়গুলো জানেন না ফলে আবেদন করতে ভূল করেন, যা আপনাকে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে দিতে পারে। নিজের সামর্থ্য বুঝেই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার হয়ে কেউ এ কাজগুলো করে দিবে না।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আপনার প্রস্তুতিঃ
এইচএসসির পরে আপনি নিজকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন? সে চিন্তাই কি আপনার মাথায় ঘুরছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রস্তুতির ধাপগুলো।
১.পাসপোর্ট তৈরিঃ
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা উঠলেই মাথায় প্রথম আসে পাসপোর্ট করার কথা। তাই এক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট রেডি রাখা আবশ্যক। অন্যথায় কোন কারনে পাসপোর্ট হাতে পেতে দেরি হলে বা পাসরর্পোটে কোন সংশোধন করার প্রয়োজন হলে তা আপনার জন্য বাড়তি ভোগান্তির কারন হতে পারে। তাছাড়া আপনি সময় নিয়ে পাসপোর্ট করে রাখলেও বেশি খরচের হাত থেকে বেচে যাবেন।
২) টার্গেট নির্ধারণ করা:
এইচএসসি পরীক্ষার পর অমুকে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে দেখে আপনিও যেতে চান, বিষয়টি এমন নয়। অন্যের সিদ্ধান্তে প্রভাবিত না হয়ে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবনের এই টার্নিং পয়েন্টে দাড়িয়ে ভূল করা চলবে না। ছত্র জীবনে অনেকেরই বিদেশে পড়ার স্বপ্ন থাকে। লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আপনাকে খুব ভেবেচিন্তে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্জিত ফলাফল, পারিবারিক সম্মতি, পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রাখা আবশ্যক।
৩) ভালো ফলাফল:
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে অর্জিত ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই স্কলারশিপ অফার করে থাকে। তাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন না হলেও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপ পেতে ভালো ফলাফল করাটা আবশ্যক। বলাই বহুল্য আপনার রেজাল্ট যত ভালো হবে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনার ভর্তি এবং স্কলারশিপের সুযোগ তত বেশি হবে।
যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন হয় না, তবুও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চাইলে ভালো ফলাফল করাটা জরুরি। আপনি যে প্রোগ্রাম বা কোর্সের জন্যই বিদেশে যান না কেন, আপনার রেজাল্ট যত ভালো হবে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আপনার ভর্তি এবং স্কলারশিপের সুযোগ তত বেশি হবে।
৪) ইংরেজিতে দক্ষতা উন্নয়ন ও যাচাই করাঃ
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে গমনে আপনাকে সর্বগ্রে ভাষাগত দক্ষতা অর্জণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। প্রত্যেকটি দেশের ভাষা ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনি যে দেশে যাবেন সে ভাষার দক্ষতা যাচাই স্কোরের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ কিংবা ভিসার জন্য নির্বাচিত হবেন। আপনি যদি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সারা-বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নাম হল IELTS, GRE, GMAT, TOFEL ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় উতরে যেতে আপনাকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
৫) সহশিক্ষা কার্যক্রমে দক্ষতাঃ
এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস আপনাকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। আপনার আবেদনপত্রে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবা, লেখালেখি, রান্না, বিতর্ক, ফটোগ্রাফি, অলিম্পিয়াডের মতো দক্ষতাগুলো আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
৬) সঠিক প্রোগ্রাম নির্ধারণঃ
আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে কোনটার বেশি চাহিদা রয়েছে, কোন বিষয়ে পড়লে আপনি সহজে পেশাগত উন্নতি অর্জন করতে পারবেন, ভবিষ্যতের পেশাগত জীবনের নিশ্চতা, প্রোগামটিতে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন, সেখানকার সুযোগ-সুবিধা কেমন, আপনার বর্তমান যোগ্যতার নিরিখে কোন কোর্সটি আপনার জন্য সময় উপযোগী, কোর্সটির মেয়াদ, কোর্সটির টিউশন ফি কেমন, সার্বিকভাবে বলতে গেলে সকল সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতাকে আপনার বিবেচনায় রাখতেই হবে।
৭) ক্রেডিট ট্রান্সফার:
আপনি যদি দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করে থাকেন এবং এখন আপনি ওই কোর্সই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী হন তাহলে আপনার ক্রেডিট ট্রান্সফার করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোর্সটির ক্রেডিট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আপনাকে অব্যাহতি পত্র দাবি করতে হবে। আপনার কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এরজন্য যা যা লাগবে:
- একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রত্যয়নপত্র।
- কোর্সের আউটলাইন ও পাঠ্যতালিকা।
- কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি।
- কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা।
- কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি।
- গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য।
- কোর্সের মেয়াদ কত দিন, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ডওয়ার্ক ইত্যাদি।
- পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে পড়তে যাওয়া প্রিতিটি ছাত্রের কাছে স্বপ্নের মত। তবে এই স্বপ্নকে লালন করতে হবে, যত্ন নিতে হবে। তা বাস্তবায়তে যথাযথ পদক্ষেপও প্রোয়জন। এজন্য আমাদের সকলেরই উচিত সব প্রকার সুবিধা-অসুবিধা খুঁটিয়ে দেখা, অসুবিধাগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবো কি না তা দেখা। এই সবকিছু ভেবে বিদেশে পড়ালেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।