তিমির বনিক, মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষকরা সাধারণত ধান চাষে অভ্যস্ত ছিলেন। সম্প্রতি তারা সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা পান। দুই মৌসুম ধরে তারা চাষ করছেন মিষ্টি কুমড়ার। এই ফলনই তাদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।
জানা গেছে, নিজের জমি, বসত ঘর, পুকুরে পাড়সহ আশপাশের খালি জায়গায় কুমড়া ফলাচ্ছেন হাকালুকি হাওর পাড়ের চাষিরা। বাদ নেই হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তর। মাঠের পর মাঠ কুমড়ার চাষ করছেন তারা। কিন্তু কিছু দিন আগেও জুড়ী উপজেলার হাওর পাড়ের কৃষকরা শুধু ধান চাষ করতেন। তাদের অপর চাষ ছিল মাছের। হাওরের সচ্ছল পানিতে তারা প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষ করতেন। নতুন করে তাদের চাষে যোগ হয় বিভিন্ন প্রজাতির সবজির। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- প্রতিটি ঋতুতেই তারা এখন সবজির চাষ করছেন। বর্ষা মৌসুমে হাকালুকি হাওর হয়ে যায় মাছের অভয়ারণ্য। শীত-গ্রীষ্মে ধান, সবজি ইত্যাদি।
সবজির পাশাপাশি এ হাওর এলাকায় বাদাম ও ভুট্টার চাষও হয়। এবার জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৯৪ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এর প্রায় সবটুকুই হাকালুকি হাওর ঘিরে।
চাষিরা বলছেন, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তারা মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকছেন। মাটি ও মাচা পদ্ধতিতে এ চাষ করছেন তারা। ফলন আসার পর নির্দিষ্ট সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন তারা। তাদের কষ্ট সফল হচ্ছে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাজারে মিষ্টি কুমড়ার বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলেও জানান তারা।
উপজেলার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে সবসহ খরচ প্রায় ৮ হাজার টাকা। এবার এ খরচের তুলনায় ফলন বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায়ও ভালো। প্রতিদিন পাইকাররা জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার একেক জন চাষি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। কেউ কেউ দুই-তিন লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন বলেও জানান চাষিরা।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, উপজেলায় এবার ৯৪ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতেই ভালো ফলাফল এসেছে। বাম্পার ফলনে চাষিরা অনেক খুশি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি কৃষকরা হাকালুকিতে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে বাদাম ও ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ সব ধরনের ফসল ভালো হয়েছে। কৃষকদের পাশে আমরা সর্বদা আছি আগামীতে ও সব সময় আমাদের যে কোন পরামর্শে পাবেন।