বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিকভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থানে মৌর্য, গুপ্ত,পাল,সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল।তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দ অসংখ্য রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কি. মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি স্থানীয় জনজীবনে আর্থ – সামাজিক প্রভাব বিস্তার করছে। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি পরিদর্শনে প্রতিদিনই দেশ- বিদেশের দর্শনার্থীরা আসেন। বগুড়া শহর থেকে শুরু করে শিবগঞ্জ মহাস্থানগড় পৌঁছানো পর্যন্ত যে সমস্ত যানবাহন ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর বেশির ভাগই বগুড়ার স্থানীয় মানুষের। এতে করে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির জন্য স্থানীয় মানুষের বাড়তি কিছু আয় হচ্ছে । আবার মহাস্থানগড়ে বেশ কয়েকটি পরিদর্শন যোগ্য স্থান রয়েছে যেমন: মহাস্থান যাদুঘর, কালিদহ সাগর, গোবিন্দ ভিটা,হাতিবান্ধা, ভাসুবিহার, চাঁদ সওদাগরের বাড়ি, বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর( গোকুল মেধ), পদ্মাবতীর বাড়ি, ওঝা ধন্বন্তরীর বাড়ি, নেতাই ধোপানীর বাড়ি, শীলা দেবীর ঘাট, দুধ পাথর, হায়াত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী ( রহঃ) এর রওজা মোবারক, হয়রত মীর বোরহান ( রহঃ) এর মাজার শরীফ,হয়রত শাহ সুলঃ মাহমুদ বঃ ( রহঃ) এর রওজা মজার শরীফ, লাহোর পীর সাহেবের মাজার, প্রধান শিষ্যের মজার, যোগীর ভবন ইত্যাদি। এই সমস্ত স্থানগুলো অজ্ঞাত মানুষের পক্ষে একা ঘুরে দেখা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন একজন গাইডের। তাই স্থানীয় বেকার যুবকদের একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এই পেশায় যোগদানের । অন্য যেকোনো বয়সের মানুষ ও গাইড হিসেবে পেশা শুরু করতে পারেন। তাছাড়া ও মহাস্থানগড় এলাকাটি যেহেতু বিশাল বড়ো, একজন দর্শনার্থীকে দীর্ঘ সময় ঘুরে ঘুরে দেখতে হয় স্বাভাবিকভাবেই তার খাদ্যের প্রয়োজন হয়, এতে করে মহাস্থানগড়ের আশেপাশে গড়ে উঠেছে অনেক দোকান – পাট, যদি আরো ভালো মানের খাবারের সরবরাহ করা হয় তাহলে দেশের মধ্যে ছাড়াও দেশের বাইরে ও দর্শনার্থীরাও আমাদের দেশীয় খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বগুড়া মহাস্থানে যেহেতু দেশি – বিদেশি সব রকমের দর্শনার্থীরা আসেন, সেখানকার স্থানীয় বিশেষ ধরনের কোনো শিল্পকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হোন যেমন : মাটির তৈরি মৃৎশিল্প,বেত বা বাঁশের তৈরি ঝুড়ি ও অন্যান্য শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে, একদিকে যেমন তাদের স্থানীয় শিল্প – সংস্কৃতির সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় জনজীবনে তৈরি যোকোনো শিল্পকর্ম তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পাশাপাশি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নেও অবদান রাখছে।
স্থানীয় মানুষদের সরকারিভাবে যদি সহায়তা করা হয় যাতে করে সেখানে আরো উন্নতমানের রাস্তা ব্যবস্থা ও যানবাহনের সুযোগ সুবিধা, সেখানে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের জন্য হোটেল, রেস্টুরেন্টে এবংবিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে লোক সমাগম আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং জাতীয় অর্থনীতও সমৃদ্ধ হবে।
বগুড়া মহাস্থানের স্থানীয় জনগনকে বিভি বিভিন্ন সভা – সমাবেশের মাধ্যম্যে মহাস্থান প্রত্ননিদর্শটির গুরুত্ব বোঝাতে হবে,একে করে তাদের দ্বারা ক্ষতির সম্ভবনা থাকবেনা বরং তারা আরো রক্ষণশীল হবেন এবং দর্শনার্থীদের সাথে ভালো আচরণ ও তাদের শিল্প – সংস্কৃতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে তাদের সংস্কৃতির সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। এভাবেই আমাদের প্রাচীন পুরাকীর্তি মহাস্থানগড় দীর্ঘসময় টিকে থাকবে।
রাকিব মাহমুদ/