জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রমজান, ঈদ, বৌদ্ধপূর্নিমা ও গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘ ৩৯ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। তবে এ ছুটির মাঝে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কোনো বিভাগ চাইলে পরিবর্তিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে। তাই অনেক বিভাগেই নির্ধারিত সময়ানুযায়ী ক্লাস – পরীক্ষা চলছে। ফলশ্রুতিতে ছুটির মাঝেও তারা এখনও হলে অবস্থান করছেন।
তবে এ ছুটি বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং। কিছু কিছু হলে ক্যান্টিন ও বন্ধ থাকছে। অপরদিকে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ক্লাস – পরীক্ষা চলমান থাকার পরও এর বিকল্প ব্যবস্থা পাচ্ছে না বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ । তাই রমজানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিপরীতে উল্টো বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী। সাহরি ও ইফতারের খাবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে তাদের কথা বিবেচনা না করেই অধিকাংশ হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছুটিতে কিছু কিছু বিভাগের ক্লাস বন্ধ হলেও অনেক বিভাগে এখনও পরীক্ষা,ল্যাব,ক্লাস চলমান। তাই অনেক শিক্ষার্থী এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজের ব্যয় বহন করছে, এজন্য দীর্ঘ ছুটিতে তারা বাড়িতে যেতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সম্প্রতি নতুন উদ্বোধন হওয়া দুটি হলের মাঝে একটি ২১ নম্বর বয়েজ হল। ১০ তলার এই ছাত্র হলে নেই কোনো ডাইনিং – ক্যান্টিন অথবা রমজানে খাবার গ্রহণের বিকল্প ব্যবস্থা। সেখানকার আবাসিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ওসমান সরদার বলেন, আমাদের খাবারের খুবই অসুবিধা হচ্ছে এই রমজানে। বিশেষ করে, সেহরির সময় এতো রাতে সেই বটে বা সালাম বরকত হলে যেতে হয়। অনেক সময় যেতে দেরি হয়ে যায়, ফলে ঠিকমতো সেহরি খেতে পারি না।আবার ইফতারের সময় শরীর ক্লান্ত থাকে,এতদূর গিয়ে ইফতার করতেও ভালো লাগে না।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান করে ওসমান সরদার বলেন, ‘আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে খুব দ্রুত হল এ ক্যান্টিন চালু করা এবং খাবারের মান নিশ্চিত করা হোক।’
এদিকে যেসব হলে ক্যান্টিন চালু রয়েছে তাও শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বটতলা ও গেরুয়ার ঢালে থাকা খাবারের দোকানগুলোকে। কিন্ত সেখানেও বিপাকে তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসব খাবার একদিনের বেশি খাওয়া যায়না,দীর্ঘদিনের বাঁসি খাবার অতি উচ্চমূল্যে এখানে বিক্রি করা হচ্ছে পাশাপাশি এসব দোকানগুলোতে ঠিকমতো মনিটরিং ও হচ্ছেন না বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন উদ্বোধন হওয়া দুটি হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আবাসিক হল আছে ১৮টি। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৯ টি। ছেলেদের নয়টি হলের মধ্যে একটি নতুন হল। বাকি আটটির মধ্যে সাতটির ডাইনিং বন্ধ এবং ছাত্রীদের নয়টি হলের মধ্যে পাঁচটিতে ডাইনিং চালু রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বাকিগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মওলানা ভাসানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. হোসেইন মোঃ সায়েম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ক্লাস বন্ধ থাকলে ডাইনিংও বন্ধ থাকে এটা হচ্ছে নিয়ম। তবে আমার হলে আজকেই (২৭ মার্চ) থেকে বন্ধ হয়েছে ডাইনিং।সেক্ষেত্রে বড় ছুটি হলে ডাইনিংও বন্ধ থাকে। তবে ক্যান্টিনের মান খারাপ হলে সেটা অবশ্যই আমরা দেখবো। আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে ইদের মিনিমাম ৩ দিন আগ পর্যন্ত ক্যান্টিন খোলা রাখতে হবে। এর মধ্যে একদিন ও যদি বন্ধ রাখে তবে ক্যান্টিনের বরাদ্দ বাতিল হবে।
বটতলা সংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের দাম ও মান নিয়ে অভিযোগ থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বটতলা সংলগ্ন তিনটি হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল এবং মওলানা ভাসানী হলের একটি কমিটি আছে বটতলার দোকানগুলো মনিটরিং এর জন্য। আমি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবো যাতে সেখানে খাবারের দাম এবং মানের ব্যাপারে তদারকি বাড়ায়ে দেয়। আমি নিজেও দরকার হয় সে কমিটির সাথে যাবো।
তবে শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, যেসব হলের ডাইনিং – ক্যান্টিন খোলা আছে সেখানকার খাবারও যথেষ্ট নিম্নমানের এবং দিনের পর দিন এ অবস্থার অবনতিই হচ্ছে। পাশপাশি খাবারের দাম বৃদ্ধি ও সম্প্রতি বেশ কিছু হলের ডাইনিং এর খাবারে পোকামাকড় পাওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, রমজানের জন্য আলাদা করে কোন ব্যবস্থা নেননি প্রভোস্ট। ডাইনিং শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে বন্ধ করে দিছেন।আর ক্যান্টিন চালু থাকলেও খাবারের মান খুবই নিম্ন যা খেয়ে রোজা রাখা কঠিন হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, অনেকের পরিক্ষা বা ক্লাস থাকার কারণে বাসায় যায়নি কিন্তু এদের জন্য কোন ব্যবস্থা করে নি প্রভোস্ট ম্যাম। কিছুদিন আগে ক্যান্টিনের খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছে প্রভোস্ট বিষয়টা জানা সত্বেও কোন ব্যবস্থা নেন নি। তবে আমারা আশা করেছিলাম রমজানে আমাদের জন্য হলের খাবারের দিকটা তদারকি করা হবে কিন্তু বরং ম্যামদের কোন ম্যাথা ব্যাথা নেই এই ব্যাপারে।
এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে ২১ নম্বর বয়েজ হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ তাজউদ্দীন সিকদার বলেন, আমার হলটি চালু হয়েছে দুই মাস।এই দুইমাসে আমি অনেক চেষ্টা করেছি এবং করছি একটা ক্যান্টিন ম্যানেজ করতে কিন্তুু কেউ আসতে চায়না,কারণ এখানে গ্যাস নেই তো। এখন আমি যদি সিলিন্ডারে রান্না করার জন্য বলি তখন আবার প্রাইসটা বেড়ে যাবে। সেই অতিরিক্ত প্রাইসটা আবার স্টুডেন্টরা দিবেনা। এই সংকটের কারণেই আমরা ক্যান্টিনটা শুরু করতে পারিনি তবে ইতিমধ্যে একটি দোকান শুরু করেছি।
এদিকে ছুটিতে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের কথা তুলে ধরে বাংলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির ফয়সাল বলেন, পবিত্র রমাদান মাস। অসংখ্য শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে। যাদের প্রায় সবাই রোজা রাখে। দুঃখজনক বিষয় হলো এ বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থীর সেহেরি ও ইফতারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় । এতে করে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভুগছে পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ব্যবস্হাপনার অভাবে। অনেকের টিউশন ও চাকরির পরীক্ষা আছে। আমাদের দাবি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলের ডাইনিং খোলা রাখুক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘সাধারণত ক্লাস বন্ধের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং বন্ধ থাকে। আর এবারের ছুটি তো দীর্ঘ ছুটি এজন্য ডাইনিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রমজানে যেসব শিক্ষার্থীদের ক্লাস – পরীক্ষা চলছে তাদের কথা বিবেচনায় রেখেই আমরা বলেছি হলের ক্যান্টিন খোলা রাখতে। আর যেসব হলে ক্যান্টিন নেই সেসব হলে কেউ যদি মেসও চালু করতে চায় তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।