আসিফুল ইসলাম রিফাত,জাবি প্রতিনিধিঃ রাত পোহালেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস । গ্রাজুয়েটদের পদচারণা, কস্টিউম সংগ্রহ, ছবি তোলা ইত্যাদি কে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
দীর্ঘ আট বছর পর শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হতে যাওয়া এবারের সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বেলা আড়াইটায় শুরু হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন রেকর্ডসংখ্যক ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্রাজুয়েট ও গবেষক। যার মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, এমফিল ডিগ্রির জন্য ৩৪ জন, পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন এবং উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ অফিসসূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ সমাবর্তনে বাজেট ধরা হয়েছে মোট ১২ কোটি টাকা। যার মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অর্থায়ন করবে ১২ লাখ টাকা। এছাড়া বাকি টাকা সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে জোগান দেয়া হবে।
এবারের সমাবর্তনে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী গ্রাজুয়েটদের মধ্যে মোট ১৬ জনকে স্বর্ণপদক সম্মাননা তুলে দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ খান। যার মাঝে স্নাতক পর্যায়ে ৮ জনকে ‘আসাদুল কবীর স্বর্ণপদক’, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৭ জনকে ‘শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক’ এবং স্নাতকোত্তর ক্যাটাগরিতে দর্শন বিভাগের সর্বোচ্চ ফলাফলপ্রাপ্ত একজনকে ‘মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টফান্ড স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হবে।
এদিকে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সমাবর্তনের ব্যানার টানানো হয়েছে। বিভিন্ন অনুষদের প্রবেশপথ নতুন করে রঙ-আলপনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শহীদ মিনারসংলগ্ন প্রধান সড়ক এবং ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর পাশে গাছের বেদি মেরামত ও ফুলগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আকাঙক্ষার এই উৎসবকে ঘিরে তারা মেতেছেন উৎসবের আমেজে। গ্রাজুয়েট – নন গ্রাজুয়েট সকলে সমাবর্তনের গাউন ও টুপি পরিধান করে দলবেঁধে তুলছেন বিভিন্ন পোজের ছবি। আনন্দে মেতে কেউ কেউ আকাশে ঝাপ দিয়ে ছবি তুলছেন আবার কেউবা সবুজ ঘাসে শুয়ে-বসে তুলছেন। কেউ আবার মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তোলার বিকল্প হিসেবে ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এই উৎসবে শামিল হতে অনেক শিক্ষার্থীরা আবার নিজেদের পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে এসেছেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আসিফ বলেন, সমাবর্তন আমাদের জন্য অনেক আবেগের বিষয়।ক্যাম্পাসের সিনিয়র -জুনিয়র সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।আমার ভীষণ ভালো লাগছে!
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ সায়েম বলেন,পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে এক উৎসবের আমেজ। অনেকদিন পর সবাইকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে খুবই ভালো অনুভব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এর আগে মোট পাঁচটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সময়ে পঞ্চম সমাবর্তনে রেকর্ডসংখ্যক ৯ হাজার গ্রাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ছিলো। যার মধ্য থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থীকে ২৩টি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।