নাইমা সুলতান পাখি, বয়স ২৪ বছর, উচ্চতা ৩০ ইঞ্চি, ওজন মাত্র ২০ কেজি। সমাজের সকল প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে নিজের প্রবল ইচ্ছে শক্তির বলে।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দায় বাড়ি পাখির। নাদের মাতব্বার ও আইমা সুলতানার তিন কন্য সন্তানের মধ্যে সবার বড় নাইমা সুলতানা পাখির জন্ম ১৯৯৯ সালে। সমাজের আর দশ জনের সাথে মেলানো যাবে না তাকে।
ব্রেন স্টোক করে শয্যাশায়ি বাক প্রতিবন্ধি পিতা নাদেরের সংসারের আলো বড় মেয়ে পাখি। তাদের কোন ভাই না থাকায় সংসারের হাল ধরতে চান ৩০ ইঞ্চি উচ্চতার পাখি। কিন্তু আকারে খর্বকায় হওয়ায় অনেক কাজ করা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার পরও হাল ছাড়তে নারাজ পাখি।
কারোর ওপর নির্ভরশিল হতে চান না পাখি, ধরতে চান পরিবারের হাল। জন্মের দুই বছর পর জানা যায় পাখি শারীরিক প্রতিবন্ধী। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। স্বাভাবিক জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে ছয় বছর বয়সে তাকে স্কুলে ভর্তি করেন তার মা। পাখি ২০১০ সালে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ২০১৭ সালে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.২৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং ২০১৯ এইচএসসি তে ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ ভর্তি হয়ে বর্তমানে সেখানে অধ্যয়রত আছে নাইমা সুলতানা পাখি। থাকছেন কলেজের হোস্টেলে। তার রুমমেটরা জানার দারুন স্বদালোপি পাখি। সম্ভব হলে কাজেও সহযোগীতা করে। গান, কবিতা ও নাচে পারদর্শী পাখি সকলকে মাতিয়ে রাখেন কলেজে।
মেধাবী পাখিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ, হোস্টেলের সকল ফি ফ্রি করে দিয়েছন। উপজেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক তাকে দিয়েছেন একটি ল্যাপটপ।
তার এই সংগ্রামী জীবন ও পড়ালেখা নিয়ে সমাজের মানুষ কটু কথা বলতেও ছাড়েনি। সব বাধা পেরিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে পাখি। তার ইচ্ছে পড়ালেখা শেষ করে করবেন সরকারি চাকরি। সমাজের বোঝা হতে চায় না সে। নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান পাখি।