ইবি প্রতিনিধি: সেশনজটের কবলে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। চার বছরের স্নাতক কোর্স শেষ করতে তাদের ৬-৭ বছর লেগে যাচ্ছে। যে কারণে বিসিএস, বিজেএসসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী চাকরি পরীক্ষায় অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে তারা। ফলে ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশায় ভূগছেন এসব শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা না নিয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া, পরীক্ষার তারিখ পেছানো, ফল প্রকাশে কচ্ছপগতি, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততা ও আভ্যন্তরীন রাজনীতিসহ নানা কারণে এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টার শেষ হলেও ইংরেজি, বাংলা ও আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের পরীক্ষা শেষ হয়নি। এছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে অন্যান্য বিভাগ গুলোতে তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং বেশ কয়েকটা বিভাগে পরীক্ষা চলমান রয়েছে। তবে বাংলা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং ও আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের কোনো পরীক্ষাই এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কয়েকমাস আগেই স্নাতক শেষ করেছেন। তবে একই সেশনের ১১টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনও স্নাতক শেষ করতে পারেনি। এই সেশনের পরিসংখ্যান বিভাগে তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা, আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা এবং আল-ফিকহ্, সিএসই, ইইই ও গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস এবং ইংরেজি, ফিন্যান্স ও আইসিটি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস চলছে। এছাড়া ম্যানেজমেন্ট ও বাংলা বিভাগে চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশিত হয়নি।
এছাড়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বেশকিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তবে আইন, পরিসংখ্যান ও আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে এখনও স্নাতকোত্তর শেষ হয়নি। তবে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সে এক বছর ধরে ক্লাস চললেও এখনও সেমিস্টার ফাইনালে অংশ নিতে পারেনি তারা। অন্যদিকে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সেও প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস ও ফরম ফিলআপ শেষ হলেও পরীক্ষা শুরু হয়নি। এদিকে আইসিটি, ম্যাজেনমেন্ট ও ইইই বিভাগে প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস চলছে। এদিকে ইইই ও ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স শেষ করতে পারিনি। ফলে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে তাদের।
ক্যাম্পাস সূত্রে, করোনা মহামারীর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যহত হয়। যার ফলে সেশন জটের কবলে পড়ে বিভাগগুলো। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যান্য বিভাগগুলো সেশন জট কাটাতে পারলেও কিছু বিভাগ এখনও জট কাটাতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সেশনজট সব শিক্ষার্থীর জন্য হতাশার। একই সেশনে ভর্তি হওয়া অন্য বিভাগের সহপাঠীরা অনেক আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন, অনেকেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন সেশনজটে আটকে আছি। এটা কি প্রশাসনের ব্যর্থতা নাকি স্যারদের অবহেলা? মাস গেলে স্যারেরা ঠিকই বেতন পান কিন্তু আমাদের দূর্দশার দিকে তারা ফিরেও তাকান না।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিটি সেমিস্টার শেষে রিটেক-ইমপ্রুভমেন্ট থাকে, যেগুলো শেষ করতে গিয়ে অনেকসময় সেশনজটের সৃষ্টি হয়। তবে দেখা যায় অনেক শিক্ষকরা রানিং শিক্ষার্থীদের ফলাফলের চেয়ে সন্ধাকালীন কোর্সের ফলাফলের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি ড. মোহা: মাহাবুুবুর রহমান বলেন, করোনার পরে কয়েকটি সেশনে দ্রুততার সাথে পরীক্ষা নিয়েছি। ৫ মাসে সেমিস্টার শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। আশা করছি ১/২ বছরের মধ্যে বিভাগে আর সেশনজট থাকবেনা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন এবং সভাপতিদের নিয়ে এবিষয়ে মিটিং হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্ট্রাল রিকোভারী প্লান ওভাবে করা হয়নি। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব যাতে একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর বহমান বলেন, করোনায় দুটি বছর চলে গেছে, যেটা মেকাপ দেয়া একটু টাফ। তবে ঠিক হয়ে যাবে, সময় দিতে হবে। আমরা এই বিষয়টা দেখছি।