ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংহতির ধারক বাহক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৭তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর)। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক সময়ের পাঠশালাটি আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ জারির মাধ্যমে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর থেকে চালু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কার্যক্রম। এরপর থেকেই দিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮-তে পা দিল।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আজ সকাল ৯টা উপাচার্যকে বিএনসিসি কর্তৃক গার্ড অব অনারের মাধ্যমে শুরু হবে কার্যক্রম। ৯টা ৫ মিনিটে জাতীয় পতাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, ৯টা ১৫ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। ৯টা ২৫ মিনিটে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রকাশনা উৎসবের উদ্ধোধন।
সকাল সাড়ে ৯টায় আনন্দ র্যালি। সকাল সাড়ে ১০টায় বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন। বেলা ১১টা থেকে তাসের দেশ নামক নাটক পরিবেশনা। বেলা ১২টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ডদলগুলোর অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে৷ সন্ধ্যা ৬টা থেকে কনসার্টে চমক হিসেবে থাকছে ওয়ারফেজ ও সহজিয়া ব্যান্ড।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় , বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭৮ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ১৪৪ জন, সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৫৬ জন। এছাড়া এমফিল ২৪৫ জন ও পিএইচডি করছেন ১৪১ জন শিক্ষার্থী।
বিগত একবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অর্জন:
নতুন ক্যাম্পাসের অগ্রগতিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সংকুলান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, নতুন একাডেমিক ভবন এবং গবেষণা কাজের সুবিধার্থে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ২০০ একর জমিতে তৈরিকৃত নতুন ক্যাম্পাসের সিমানা প্রাচীরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে মাস্টারপ্লানের কাজ ।
নতুন ছাত্রী হলঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে তৈরিকৃত একমাত্র ছাত্রীহল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বর্তমানে ১৫৬টি কক্ষে ১২০০ জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। হলের নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ও ডাইনিং।
কাউন্সিলিং সেন্টারঃ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা, বিষণ্ণতা, পরীক্ষা ভীতি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গত ৩ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রতিষ্ঠিত হয় কাউন্সিলিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠার পর গত নয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থী এ সেন্টার থেকে সেবা নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু চেয়ারঃ বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন, মতাদর্শ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর। ডিনস কমিটির ১৩তম সভার সুপারিশ অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের ৯০তম সভায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার নীতিমালা-২০২২’ অনুমোদন হয়। খুব দ্রুতই একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক, বিশিষ্ট গবেষক ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষককে এ চেয়ারে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে ৩য় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক মূল্যায়নে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৯৩.৭৫ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
রসায়নে দেশসেরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাং কিং-২০২২ এর প্রকাশিত ফলাফলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রসায়ন বিষয়ে গবেষণা সূচকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথমস্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নঃ মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ইসাবা মাসনুন।ফাইনাল ম্যাচে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকসহ মোট ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবাড়ুদের সাথে জয় লাভ করেন ইসাবা মাসনুন।
চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে চালু হয় চক্রাকার বাস সার্ভিস। ২৯ মে ২০২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয়কৃত একটি দ্বিতল বাসের মাধ্যমে এ সেবা শুরু হয়। বাসটি ১.৩০টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে দয়াগঞ্জ, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ, মৌচাক,বাংলা মোটর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও গুলিস্তান হয়ে আবারো ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে আমি কাজ করছি। আমরা গবেষণা খাতে গতবারের ছেয়ে বাজেট ডাবল করে দিয়েছি। গবেষণার উন্নয়নে আমি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কিছু জটিলতা ছিলো। সেটা আমরা পুনরায় তৈরী করেছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আমরা চুড়ান্ত কাজ শুরু করবো। এছাড়া ও আমি নিয়মিত মনিটরিং করছি। একটা কমিটি করে দিয়েছি তারা আমাকে নিয়মিত আপডেট পাঠাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সিমাগো র্যাকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ দেশে প্রথম হয়েছে। এপিএ র্যাকিংয়ে আমারা ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় হয়েছি। আমাদের দুইজন শিক্ষক এবার ইউজিসি গোল্ড মেডেল পেয়েছে। সর্বোপরি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হয় এবং এটা একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয় সেই প্রত্যাশা রেখে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।