একদিন আমরাও…!
তখন এমন কিছুই মনে হতো। সেই সময় যখন বাংলাদেশ সবে ওয়ানডে মর্যাদা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন-অরবিন্দ ডি সিলভারা ব্যাট করছেন দাপটের সঙ্গে।
সে সময়কার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৫০ ওভারের ম্যাচে ‘৫০–এর পঞ্চাশ’ অর্থাৎ ৫০টি অর্ধশতক খুব কম ব্যাটসম্যানেরই ছিল। আজহারউদ্দিন ও ডি সিলভা আর সাবেকদের মধ্যে ডেসমন্ড হেইন্স ও জাভেদ মিঁয়াদাদ…এই তো!
আজহারউদ্দিন কিংবা ডি সিলভা ব্যাটিংয়ে নামলে তাঁদের পরিসংখ্যানে ৫০–এর পঞ্চাশ দেখে কি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও স্বপ্ন দেখেননি—একদিন আমরাও মাইলফলকটার দেখা পাব!
আজহারউদ্দিন-ডি সিলভার যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তা ২০০০ সালের মধ্যে। বাংলাদেশের ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার তিন বছর তত দিনে পেরিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ময়দানে তখন হামাগুঁড়ি দেওয়া বাংলাদেশ থেকে এই ২৫ বছরে ওয়ানডেতে দুজন অন্তত ‘৫০টি পঞ্চাশ’-এর দেখা পেয়েছেন।
গত বছরের মার্চে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৮ রানের ইনিংস দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০টি অর্ধশতকের দেখা পান তামিম ইকবাল। মোট ৫১ অর্ধশতক নিয়ে এই তালিকায় তামিম-ই শীর্ষে।
বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কাল সেখানে নাম লেখালেন সাকিব আল হাসান। সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটি তাঁর ক্যারিয়ারের ৫০তম ওয়ানডে অর্ধশতক। তবে সাকিব একটি জায়গায় বাকি সবার চেয়ে আলাদা। জায়গাটি অবশ্যই অলরাউন্ডারদের—ওয়ানডেতে ন্যূনতম ২৫০ উইকেট এবং ৫০টি অর্ধশতক আছে, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা হাতে গোনা।
সব মিলিয়ে তিনজন। সাকিব সে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। কিংবা এভাবেও বলা যায়, জ্যাক ক্যালিস ও সনাথ জয়াসুরিয়াদের সে তালিকায় কাল জায়গা করে নেন সাকিব।
আবার ক্যালিস বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে। ৮৬টি অর্ধশতক পেয়েছেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি। লঙ্কান কিংবদন্তি জয়াসুরিয়ার অর্ধশতকসংখ্যা ৬৮। সাকিব ৫০টি অর্ধশতক নিয়ে তৃতীয়। এই তিন অলরাউন্ডার ছাড়া আর কেউ ওয়ানডেতে ন্যূনতম ২৫০ উইকেট ও ৫০টি পঞ্চাশের দেখা পাননি।
উইকেটসংখ্যার শর্ত পূরণ করলেও ৫০টি পঞ্চাশের দেখা না পাওয়ায় অভিজাত এই তালিকায় জায়গা না পাওয়া ক্রিকেটারদের নাম শুনলে অবাক লাগাই স্বাভাবিক—শহীদ আফ্রিদি (৩৯ অর্ধশতক), আবদুল রাজ্জাক (২৩ অর্ধশতক), কপিল দেব (১৪ অর্ধশতক), শন পোলক (১৪ অর্ধশতক), ওয়াসিম আকরাম (৬ অর্ধশতক)…।
এবার একটু অন্য হিসাব করা যাক। ক্যালিস ৩২৮টি ওয়ানডেতে ৩১৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ৩.৬৫ ইনিংস পর একটি করে অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন সাবেক পেস অলরাউন্ডার। জয়াসুরিয়া ৪৪৫ ম্যাচে ৪৩৩ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। প্রতি ৬.৩৬ ইনিংস পর একটি করে অর্ধশতক।
২১৯ ম্যাচ খেলা সাকিব ব্যাট করেছেন ২০৭ ইনিংসে। প্রতি ৪.১৪ ম্যাচ পর অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের এই স্পিন অলরাউন্ডার। অর্থাৎ অর্ধশতকপ্রতি ইনিংসের হারে জয়াসুরিয়ার চেয়ে এগিয়ে আর ক্যালিসের পেছনে সাকিব।
বোলিংয়ের পরিসংখ্যানে তাঁদের কাউকেই একে-অন্যের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ইনিংসের সেরা বোলিং ফিগারের কথাই ধরুন, তিনজনই ইনিংসে ন্যূনতম ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন। সাকিব ৩ বার, ক্যালিস ২ বার ও জয়াসুরিয়া ৪ বার।
সেরা বোলিং ফিগার আদায় করতে গিয়ে সাকিব ও জয়াসুরিয়া সমান ২৯টি করে রান দিয়ে যথাক্রমে ৫ ও ৬টি করে উইকেট পেয়েছেন। ক্যালিস তাঁদের চেয়ে ১ রান বেশি দিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
ক্যালিসের ওয়ানডে ক্যারিয়ার টিকেছে ১৮ বছর, জয়াসুরিয়ার ২২ বছর এবং সাকিব ১৬ বছর হলো খেলছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের হাতে সময় বেশি নেই। আর হয়তো দুই-তিন বছর। পরিসংখ্যানটা আরও ভালো করে এমন সব কীর্তিমানদের অন্যান্য তালিকায় নাম লেখাতে সাকিবকে যা করার এর মধ্যেই করতে হবে।