The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরা শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

রমজানে একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর যে উৎসব তাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ বেশি। ঈদ মানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। ঈদে বাড়ি ফেরার মধ্যে এক প্রকার আনন্দ আছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ে পরিবার থেকে আলাদা থাকার পর ঈদে প্রিয় মানুষদের কাছে পাওয়া যায়। ঈদে বাড়ি ফেরা মানেই নিজেকে ফিরে পাওয়া। দিন শেষে সবাই ফিরতে চায় নিজের কাছে। পরিবারের পরিজনের সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে চায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দের অনুভূতি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থী ও রাইজিং ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মো. আমান উল্লাহ।

আনন্দধারা ইদের আগমনী প্রহরটা……

আঁধো আলো ছায়াতে স্মৃতিরা বারবার কাঁতরায় সেই অপেক্ষায় যেখানে প্রিয়মুখগুলো হাসিমাখা হয়। যেখানে চিন্তার পাহাড়গুলোকে যোজন যোজন দূরে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়া যায়। চাতক পাখি হয়ে নীড়ের কথা বলছি। বলছি মায়া জড়ানো সেই আভাসের কথা। যাকে ছেড়ে এসে ভবঘুরে হয়ে ঘুরে ফিরছি ক্যাম্পাসে। এই সবুজ শ্যামল মায়াবী চত্বরে। পাখি, ফুল আর দেয়ালের মায়ায় আটকে যাচ্ছি বারবার বারংবার। পবিত্র রমজানে প্রথম কাটছে হলের মায়াঘেরা আঙিনায়। যেখানে আমার আবেগ জড়ানো স্বজনরা কেউ নেই। তবুও যেখানে শূন্যতা কভু দেখা দেয় নাহ। দুষ্টু বন্ধুরা মিলে দিব্যি কাটছে অসময়, দুঃসময়, সুসময়ও। রাতে চায়ের আড্ডায় একপশলা হাসিও হেসে নিচ্ছি রোজ নিয়ম করেই। রুমে ফিরে অগোছালো মানুষ নামে খ্যাত হয়েও সবকিছু গুছিয়ে নিতে শিখে যাচ্ছি। তিক্ততা আর বাহারি কল্পনার জগতে বিচরণ করছি ঘুমের রাজ্য গিয়ে। এলার্মের শব্দে কখনোই সময় করে জাগা হয় নি তবুও কিন্তু এলার্ম দিতে ভুলছি নাহ। চোখে রাজ্যের ঘুম থাকা সত্বেও সেহেরির তাড়নায় ঠিক ঠিক ঘুম ভেঙে জাগছি। সেই সময় বারবার মনে হয় কেউ হয়তো ডাকছে। স্মৃতিরা করছে পাকড়া। আর তারপর? ছুটে চলা খাবারের পিছনে। সেই এক ভিন্ন ধরনের তিক্ততা। সেই সঙ্গে মনের সঙ্গে মিল না থাকায় অভিজ্ঞতা হচ্ছে হলের খাবারের ভিন্নতায়। মানিয়ে চলার দুঃসাহসিক মনোভাব তো অর্জন করে নিতে হচ্ছে। তবে ভালো লাগারও সীমাহীন গন্তব্য এখানে। এই যে সবাই মিলে হাসি তামাসার ছলে সঙ্গীদের সাথে যে ভাব তা হয়তো স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করবে। নিজের সাথে নিজের যে প্রতিযোগিতা, সবকিছু মানিয়ে নিয়ে চলার যে সাহসিকতা তা তো অর্জন হয়েই যাচ্ছে।

চার দেয়ালের সুন্দর এই জগতে, হল জীবনে সবকিছু পেরে উঠতে হচ্ছে, পারতে হচ্ছে। নিজের কাছে নিজেকে জয়ী হতে হচ্ছে। জীবনের সবকিছু আসলে মসৃণ হবে তা হয়তো কোথাও লিখিত নেই৷ মাঝে মাঝে মন খারাপের কত যে অধ্যায় রচিত হচ্ছে তা হয়তো অগোচরেই রবে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে নীড়ে ফেরার উচ্ছ্বাসে। ঈদের নতুন জামা, নতুন জুতো আর নতুনত্বের কত যে সমাহারের জগত ভেতরে কাজ করছে তা আমার আপনজনরা ভালো জানে। কবে ছুটির নোটিশ পাবো এই যে আকুলতা তা হয়তো আমার ভেতরটাই শুধু জানে। বন্ধুবান্ধব আর ক্যাম্পাসের স্বজনরা জানে নীড়ে ফেরার কি যে তৃষ্ণা। এত কিছুর পরও অন্যরকম স্নিগ্ধতা কাজ করে যখন সবাই একই মোহে বসে থাকি ইফতারের আগে। সেই যে পবিত্র আযানের জন্য যে অপেক্ষা তা সবাইকেই করবে৷ কিন্তু তারপরও প্রিয়জনদের অধ্যায়টা সত্যি আলাদা। তাইতো ফিরবো নীড়ে বাসের জানালার সেই স্নিগ্ধ বাতাসে বাতাসে ইদের আনন্দ মিছিলে……

মোছা: আফলাতুন নাহার লোনা, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

রমজানে, সংযমে নীড়ের মায়ায় ঈদের উচ্ছ্বাস

পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মিলালে তা অসীম ফাংশনের মতো কখনোই হয়তোবা মিলবে নাহ। আভিজাত্যের বিলাসী কল্পনা বার-বার হার মানবে হল লাইফের চার দেয়ালের কাছে। ব্যক্তিগত ভালো থাকাটাই অনেকাংশে প্রাধান্য এখানে৷ তবে তার আড়ালেও কিছু ভালো লাগা স্নিগ্ধতা বিস্মিত হয়ে দেখা দেয় ঐ হিয়ার মাঝে। সন্ধ্যে নামার আগে পবিত্র মাহে রমজানে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধনের খোঁজ পাওয়া যায় তা উত্তরবঙ্গের স্মৃতিকে গভীরভাবে স্মৃতিচারণ করে। জীবন আসলে বিলাসী, কল্পনা নয়। বাস্তবতার চারণে নির্মিত এক সুন্দর ফ্রেমে বন্ধি চিত্র। নিজের জীবনের গতি পথ নিজেই বেছে নেয়ার পর্ব হল জীবন। ঠিক তেমনভাবে স্বাধীনভাবে চলার যে প্রবণতা তার সাথে নিজের কাজ, নিজের প্রয়োজনীয়তা নিজেকেই বুঝে উঠতে হয়। সেহেরিতে যেখানে ঘুম থেকে জেগে তুলার জন্য বাসায় প্রিয় মানুষগুলো তিক্ত হতো সেখানে ঘুম থেকে জেগে উঠে ছুটতে হয় এক মুঠো খাবারের জন্য। মাঝে মাঝে ভীষণ তিক্ততা কাজ করে নিজের প্রতি, জীবনের প্রতি। আবার মনে হয় সবার সাথে এই যে খাবারের জন্য ছুটে চলা ব্যাপারটা নিজেকে হয়তো দায়িত্ব নিতে শিখাচ্ছে। নিজের সাথে বারবার যুদ্ধে জিততে হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের এক বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবার পরিজন আর প্রিয়জন ছেড়ে রমজান শিখাচ্ছে সংযমী হওয়া। জীবনের প্রতি এই যে মায়া, নিজের কাজ নিজে করতে শিখা, সবার সাথে চলার যে সক্ষমতা তা হয়তো নীড়ে বন্দি থাকলে জানা হতো না, শিখা হতো নাহ। এত দূরে এসেও বন্ধুদের সাথে থেকে নিজেকে ভালো রাখার দিব্যি যে মানসিকতা তা হয়তো জীবনের জন্য খুব করে দরকার ছিল। আর মাঝে মাঝে বাসায় ফিরে যাওয়ার যে কি ভীষণ তাড়না তা হয়তো নীড় হতে যোজন দূরে আসা বন্ধুরা ভালো জানে। জানে নীড়ে থাকা অপেক্ষাকৃত প্রিয় মুখগুলো। ঈদের আনন্দে বাসায় ফিরার তাড়না সক্রিয় হয়ে উঠে টিকিট হাতে পাওয়ার সাথে সাথে। সে যে কি উচ্ছ্বাস তা হয়তো শুধু হৃদয় জানে। ফোনের ওপারে তাইতো অপেক্ষাকৃত প্রিয়জনকে বলি আসছি নীড়ে ইদের উচ্ছ্বাস।

মো: তোহান আলী মন্ডল, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

নাড়ির টানে বাড়িতে ঈদ উৎসব

আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম রোজার সময় আর ইদের সময়টা। ছোট থেকেই আব্বু, আম্মুর সাথে এই মধুর সময়টা কাটানো হয়। হয়তো সৌভাগ্য বলা যেতে পারে আমি এবারো বাবা মার সাথেই এই সময় টা পার করছি। যেখানে ক্যাম্পাসের সকলে নিজের শেকড় থেকে দূরে কষ্ট করে যাচ্ছে আমি বাবা মার সাথেই আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এর মাঝেও ২ দিন বাবা মা ছাড়া জীবনের প্রথম ও ২য় ইফতার আমার বন্ধু আর সমিতির সাথে কাটিয়েছি।এ অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কাছ থেকে সবার সুখ ত্যাগ করা দেখলাম একটা ভালো ভবিষ্যতের আশায়। “স্বপ্ন বাড়ি যাবে আমার” – গানটা হয়তো আমার জন্য প্রযোজ্য না। আমার স্বপ্ন তো বাড়িতেই! কিন্তু বাকি সবার বাড়ির প্রতি টান, প্রথমবারের মতো বাসার বাহিয়ে ইফতার এসব দেখে অনেক কিছু বুঝতে শিখলাম। এক বছরেই মনে হলো সবাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলো। ইদ শেষে সবার সাথে আবার যান্ত্রিক জীবনে দেখা হবে দ্রুতই ইন শা আল্লাহ।

আইরিন রহমান প্রমি, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি অনুষদ

বন্ধুদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি

ক্যাম্পাসে আসার পর এটা আমার জীবনের প্রথম রমজান। প্রথমে অনেক ভয়ে ছিলাম পরিবার ছাড়া ক্যাম্পাসে কেমন কাটবে রমজান। কিন্তু রমজান শুরু হতেই হলের বড় ভাইদের আন্তরিকতা বন্ধুদের আচরণ এবং শিক্ষকদের স্নেহ আর বাকৃবির সৌন্দর্য আমাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে। একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতায় রমজানকে বরণ করে নিলাম। ১৭ এপ্রিল ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার ঘোষণা হলে, সে যেন হলে এক মহা উৎসব সকলেই ফিরবে তার স্বপ্নের নারীর টানে বাড়িতে। সবার মধ্যে ছিল একটি আলাদা উত্তেজনা বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ঈদের শপিং এবং বাসায় ঈদ উদযাপনের আলোচনা নিয়ে প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু চত্বরে ইফতারের পরে সকলে মিলে। আড্ডা দিতাম। সকলে বাসায় গেলেও আমরা প্রতিদিন ভিডিও কলে ঈদের শপিং এবং ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। সন্ধ্যার পরই সকলে আড্ডা জমায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কি প্লান করছে ঈদে। এ যেন জীবনে একটি নতুন দিগন্ত, ক্যাম্পাসে সবার সাথে ঈদ উদযাপন করা। শিক্ষক, কর্মচারী সিনিওর ভাই এবং বন্ধুদের নিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এবারের ঈদের আয়োজন। জীবনে এবার ঈদুল ফিতর এক অন্যরকম রং নিয়ে এসেছে, খুবই সুন্দর কাটছে চলেছে এবার ঈদ ভার্চুয়ালি সকলকে কাছে পেলেও বাস্তব শূন্যতা থেকেই যায়। সব মিলে অনেক প্লান নিয়ে সুন্দর করে ইদুল ফিতর উদযাপন করতে চলেছি।

মো. বিজয় ইসলাম, দ্বিতীয় বর্ষ, পশুপালন অনুষদ

ঈদে পরিবারকে সময় দিন

২০২৩ এর প্রথম ১৪ টা রোজা আমার জীবনে রাখা সবথেকে কঠিন রোজাগুলোর মধ্যে কয়েকটা। যেইখানে বাবা-আাম্মু,ভাই-বোন কে রেখে একদিনের জন্য ও কোথাও যায়নি সেইখানে সেহরি -ইফতার করবো তাদেরকে ছাড়া সেইটা বোধহয় স্বপ্ন ও দেখি নাই কোনোদিন। বাকৃবি ক্যাম্পাস এ প্রথম রমজান মাস যে খুব ভালোভাবেই কাটসে তা বলা একেবারেই আমার জন্য দেয়ালে এর সাদা রঙের মতো অনুভূতিহীন। সকাল ৯ টা থেকে ক্লাস শুরু এরপর বিকাল ৩-৪ টা পর্যন্ত ক্লাস,এরপর ইফতারি সেহরি কি দিয়ে করবো সেইটা আরেক কাহিনী।

এইবার এর প্রথম রোজায় শুকনা পিয়াজু,আর ঠান্ডা আলুর চপ খাওয়ার সময় আম্মুর হাতে বানানো পিয়াজু, চপ আর বাবার হাতে মাখা মুড়ির স্বাদ মনে পড়লেও সেই শক্ত পিয়াজু দিয়েই কোনোভাবে ইফতার সেরেছি। কারণ ক্যাম্পাসে আসছি কয়েক মাস হয়ে গেসে আর একটা জিনিস ও ততদিনে বুজ হয়ে গেসে এখানে আপনার যত্ন আপনার নিজেকেই নিতে হয়। এরপর শুরু এক মহাযজ্ঞ। মানে বিভিন্ন জেলা সমিতি এর ইফতার,সংগঠন এর ইফতার, ফ্যাকাল্টির ইফতার,হলের ইফতার,নিজের রুমমেটদের সাথে ইফতার ইত্যাদি। কিন্তু এতসব ইফতার এ বাসার ইফতার এর অঅনুভূতি পায়নাই। যদিও ক্যাম্পাস আমার ফ্যাকাল্টি একটা ছোটো খাটো পরিবার। আমার জীবনে এইরকম বিভিন্ন জায়গার মানুষের সাথে ইফতার করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। এই অভিজ্ঞতা জীবনের পরবর্তী সময়ে মনে থাকার মতো কিন্তু নিজের পরিবার এর সাথে ইফতারি করার গুরুত্ব টা তার থেকেও অধিক মূল্যবান। তাছাড়া ট্রেনে বাসায় আসার সময় সব অপরিচিত মানুষগুলার সাথে একসাথে ইফতার এর সময়টা ও আমার জীবনে অন্যতম মুহূর্তগুলোর একটি। ঈদে পরিবারের সাথে সময় দিতে পারা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

আতিয়া ইবনাত লামিয়া, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে

গতবছর ক্যাম্পাস এ আসলেও রোজা তে নিজ ক্যাম্পাসে থাকার অভিজ্ঞতা এবারই। সারাদিন রোজা রেখে ক্লাস,ল্যাব, টিউশনি পর সন্ধ্যাবেলা হলে কিংবা ক্যাম্পাস এর মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার আনন্দই অন্যরকম। পরিবার ছেড়ে এই ক্যাম্পাসে যখন ভিন্ন অঞ্চল এর বন্ধু ও ভাই দের সাঠে ইফতার করতে বসি, তখন মনে হয় যেন পরিবারের সঙ্গেই বসে ইফতার করছি।

ক্লাস, ল্যাব, এসাইনমেন্ট এসবের মধ্যে ছুটি পেয়ে বাড়িতে যাওয়ার আমেজ দিয়েছে ঈদ এর ছুটির আনন্দ কে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িতে এসে বাবা মায়ের সাথে ইফতারী, সাহরী ,ছোট ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি। সবমিলিয়ে এই পছন্দ গরমেও মধ্যেও খুব আনন্দ কাটতেছে ঈদের-ছুটি।

আব্দুল্লাহ আল মামুন, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.