যবিপ্রবি প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি)পুষ্টি খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও তার সহযোগীদের দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১২ ঘটিকায় যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও কর্মচারী শাহিনুর রহমান সাগরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, এই কর্মচারী বাদল ইতিপূর্বে শিক্ষার্থীদের উপর নানানভাবে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তিনি মূলত কর্মচারী মোড়কে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। অবিলম্বে এই হামলার বিচার চাই এবং বাদলের স্থায়ী বহিষ্কার চাই।
কর্মচারী বাদলকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী এইচ এম মারুফ হাসান বলেন, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যদি বাদলকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা হয় তাহলে ঈদের ছুটির পর কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে এতে হামলাকারী ও হামলার মদদদাতারা কেউই রক্ষা পাবে না।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান সুকর্ণ বলেন, সন্ত্রাসী বাদলের (কর্মচারী) কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিলো, যারা দরুণ ২০১৬ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো তবে সেই বহিষ্কার ছিলো সাময়িক। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে বিভিন্ন মামলার আসামী হয়েছে সে। সেই বাদল আবার ক্যাম্পাসে ফিওে এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছে। বিভিন্ন সময়ে তাকে (বাদল) মাননীয় উপাচার্যের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে খারাপ আচরণ করতে দেখেছি। বাদলের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে। তাছাড়া বর্তমানে হত্যা মামলা সহ বিভিন্ন মামলার আসামি এই কর্মচারী বাদল। তার বিরুদ্ধে আদালতে কয়েকটি মামলা চলমান। বারবার সাময়িক বহিষ্কার ও বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েও তিনি এখন স্বপদে বহাল রয়েছেন।
অন্যদিকে হামলার শিকার শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন হামলার বিচার চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। হামলার বর্ননা দিয়ে তার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি এর যথাযথ বিচার চান।
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পেটানোর অভিযোগে সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও শাহিনুর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জমির মালিক (ক্রয়সূত্রে) মুজাহিদ হাসান গত শুক্রবার বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় মামলা করেন।
মামলার কপিতে জানানো হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে চার শতক জমি ক্রয় করেন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামমুন ও কর্মচারী মুজাহিদ হাসান। জমি ক্রয়ের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার বাদল ও তার সহযোগীরা ভোগদখলে বাধা সম্মুখে ও মুঠোফোনে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদান করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ এপ্রিল রাত ০৯.৩০ ঘটিকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কর্মচারী বাদল ও সাগর সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন হাতে হাতুড়ী ও লোহার রড নিয়ে ক্রযকৃত জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে। তখন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রতিবাদ করায় বদিউজ্জামান বাদলের হাতে থাকা হাতুড়ী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ডান পায়ের হাটুর নিচে আঘাত করে গুরুতর জখম করে এতে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তখন কর্মচারী শাহিনূর রহমান সাগরের হাতে থাকা হাতুড়ী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় এলোপাতাড়ী আঘাত করে জখম করে। মারপিটের আঘাতে মামুন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাতনামা আসামীরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন এলোপাতাড়ী আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। তখন ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল মামুন জীবন বাঁচানোর জন্য চিৎকার দিলে কর্মচারী মুজাহিদসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে বিবাদীরা বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও খুন জখমের হুমকি দিয়ে চলে যায়। বিবাদীদের মারপিটের আঘাতে মামুনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কর্মচারী বাদল দ্বারা নির্যাতিত শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং রেজিস্ট্রারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছি। সিকিউরিটি সুপারভাইজার বাদল ইতিপূর্বেও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে অসদাচারণ ও হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যার দরুণ সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিকবার বহিষ্কার হয়েছে। সে হত্যা মামলারও আসামী। বাদল ঠিকমতো তার অফিসিয়াল ডিউটিও পালন কতো না যার দরুণ আমি তাকে প্রায় তিন মাস আগে বিনা বেতনে রেখেছিলাম, পরবর্তীতে তার অনুনয়-বিনয় ও আকুতিতে তাকে আবার ডিউটিতে যোগদান করানো হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়টি কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।