ঢাবি প্রতিনিধিঃ গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল শিক্ষার্থী । এর প্রেক্ষিতে, গত ৩ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবিষয়ে একটি জরিপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। এতে ঢাবির ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ থেকে ২৩-২৪ সেশনের মোট ২২৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহনকারী সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন দলীয় রাজনীতি সমর্থন করেন না।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ।
ঢাবি গবেষণা সংসদের সভাপতি ফাহিম হাসন মাহদী জানান, জরিপ পরিচালনায় সকল তথ্য ও উপাত্ত অনলাইন সার্ভের (গুগল ফর্ম) মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, জরিপে অংশগ্রহনকারী ৯৬% শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। এরমধ্যে ৮৩.৮% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে একেবারেই নিষিদ্ধ চান। সংস্কারকৃতরূপে ১৬% শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই প্রত্যাশা করেছেন মাত্র ০.২%।
৮৮% শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কোনো গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন। ১% দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর খুবই ইতিবাচক প্রভাব ও ২% ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে মনে করেন। তাছাড়া ১% শিক্ষার্থী মনে করেন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প হিসেবে ৮১.৯% শিক্ষার্থী নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এর পক্ষে মত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে ৮০% শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ছাত্রসংসদ চান, তবে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চান না বলে মতামত দিয়েছেন।
ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রদানকে ৯৪% শিক্ষার্থী সমর্থন করেন না। ৯৫% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন না। ৮১% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া এই জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০% শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন না বলে জানান। ৮৬% শিক্ষার্থী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই (জরিপে অংশগ্রহণকালীন সময়ে) বলে জানিয়েছেন।
যেসকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেন তারা এর কারণ হিসেবে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্ব নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রকৃত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম নয় বলে মনে করেন ৮৭% শিক্ষার্থী।
ছাত্ররাজনীতির কারণ হিসেবে পূর্বের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা (গণরুম ও গেস্টরুম, টর্চার সেল জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং এ অংশগ্রহণ করানো ইত্যাদি) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া দলীয় ছাত্ররাজনীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাবি গবেষণা সংসদ।
ছাত্ররাজনীতি গবেষণা জরিপের ফলাফল অনুযায়ী কয়েকটি সুপারিশ করে ঢাবি গবেষণা সংসদ –
১) দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ
২) ডাকসু পুনর্জীবিত ও সংস্কার
৩) শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন
৪) শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা