ভারতের বোতলজাত পানির বাজার অনেকটাই তাদের দখলে। ব্যবসাও বাড়ছে দিনে দিনে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের বয়স হয়ে যাওয়ায় চাচ্ছিলেন নিজের উত্তরসূরীকে দায়িত্ব দিতে। তিনি সন্তানকেই সেই দায়িত্ব দিতে চান। কিন্তু সাত হাজার কোটির ব্যবসার দায়িত্ব নিতে রাজি নন সন্তান। বলা হচ্ছে ভারতের বোতলজাত পানির কোম্পানি বিসলেরির কথা।
বিসলেরির বর্তমান চেয়ারম্যান রমেশ চৌহান চেয়েছিলেন একমাত্র মেয়ে জয়ন্তী চৌহানকে কোম্পানির পরবর্তী চেয়ারম্যান বানাতে। ২৪ বছর বয়সে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজও শুরু করেছিলেন তিনি। কোম্পানিতে জয়ন্তী পরিচিত জেআরসি নামে।
রমেশ চৌহানের বয়স হয়েছে ৮২, চাচ্ছিলেন মেয়েই ধরুক তার ব্যবসার হাল। বিসলেরির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বও সামলাচ্ছেন জয়ন্তী। ব্যবসায়িক নানা কাজে যুক্ত থাকলেও ২৪ বছর বয়সী জয়ন্তী বাবার ব্যবসার হাল ধরতে নারাজ। মেয়ে চান না সাত হাজার কোটি রুপির সেই ব্যবসার কর্ণধার হতে।
মেয়ে না চাওয়ায় ব্যবসা বেচে দিতে হচ্ছে রমেশ চৌহান। এ জন্য আলোচনা চলছে ভারতের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ টাটার সঙ্গে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি সবকিছু। রমেশ চৌহানের হাত ধরে ভারতে মিনারেল ওয়াটার বিসলেরির জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
একমাত্র মেয়ে জয়ন্তী চৌহানের বাবার ব্যবসায় আগ্রহ না থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই টাটা গ্রুপ বিসলেরি কেনার প্রস্তাব দেয়। সবকিছু বিবেচনা করেই রমেশ চৌহান টাটা গ্রুপের কাছে বিসলেরি তুলে দিতে চাচ্ছেন।
তিনি মনে করেন, টাটা গ্রুপ এ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে আগের থেকে অনেক ভালো রাখবে। কারণ, তিনি টাকার জন্য বিসলেরি বিক্রি করছেন না। তিনি চান তাঁর প্রতিষ্ঠানের বর্তমানের আবেগ এবং উৎসাহ আগামীতে থাকুক। টাটা সেটি বজায় রাখতে পারবে বলেই বিশ্বাস। রমেশ চৌহানের আপাতত লক্ষ্য বিসলেরি বিক্রির পর সেই টাকা নিয়ে পরিবেশ রক্ষা, জনসেবামূলক কাজ শুরু করবেন।
জয়ন্তী চৌহানের ছোটবেলা কেটেছে দিল্লি, মুম্বাই ও নিউইয়র্কে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন লস অ্যাঞ্জেলসের ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনিং অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজিংয়ে। তিনি সেখানে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে পড়াশোনার পর ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি আলোকচিত্র নিয়েও পড়াশোনা করেছেন।
বাবার দিল্লির অফিসে কাজের দায়িত্বও সামলিয়েছেন। ২০১১ সালে মুম্বাইয়ের অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসব কাজের মধ্য দিয়ে কোম্পানির কাজও হাতেকলমে শিখেছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে ব্যবসায়ের গণ্ডিতে আটকে রাখতে চান না। তাই কোম্পানির কর্ণধার আপাতত হতে চাইছেন না। তবে মেয়ে কেন ব্যবসার হাল ধরতে চান না, তা জানাননি রমেশ চৌহান।
জয়ন্তী দায়িত্ব নিয়ে পানীয় কারখানার নানা সংস্কার করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে তাঁরই হাত ধরেই। সংস্থাটির ভেতরেও নানা বদল ঘটিয়েছেন জয়ন্তী। মানবসম্পদ উন্নয়ন থেকে সেলস এবং মার্কেটিং—সব বিভাগকে নতুন করে সাজিয়েছিলেন। জয়ন্তীর উদ্যোগে বেশ কিছু নতুন পণ্যও বাজারে আনে বিসলেরি।
বিজ্ঞাপনী প্রচারেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। পণ্য বিক্রি ও বিপণনের দায়িত্বে থাকা দলের নেতৃত্বে ছিলেন জয়ন্তী। ব্র্যান্ডের মান ও নাম দুটিই তাঁর হাত ধরেই এগিয়েছে। [সূত্র: এনডিটিভি]