The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

৫৫ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শেখান দৃষ্টিশক্তিহীন মান্নান

ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন হওয়ায় এই সুন্দর পৃথিবীর আলো তিনি কখনোই দেখতে পারেননি হাফেজ আব্দুল মান্নান। তবে শুনে শুনে কোরআন শরীফ মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন তিনি। আর সেই কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ৫৫ বছর ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার এক মহান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হাফেজ আব্দুল মান্নানের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার মৌকরন ইউনিয়নে।

এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে বেশ পরিচিত আব্দুল মান্নান। এলাকার যেকোনো ধর্মীয় কাজে সবার আগে দাওয়াত দেওয়া হয় হাফেজ আব্দুল মান্নানকে। তার ৩টি মেয়ের মধ্যে ২ জন‌কে বিয়ে দিয়েছেন। এখন বাড়িতে তার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে রয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ হাফেজ মান্নান ৩ জনের সংসার খুব কষ্টে চালিয়ে যাচ্ছেন। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও দৈনন্দিন কাজ তিনি সঠিকভাবেই পরিচালনা করতে পারেন। সেই সাথে চেষ্টা করছেন সবার মাঝে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে।

নামাজ শেষে সবাই চলে গেলে মসজিদে বসে বাচ্চাদের কোরআনের পাঠদান শুরু করেন। কোরআন শরীফ শেখানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে শিশুদের শিক্ষা দেন তিনি। কোরআন প্রচারের জন্য তার আগ্রহ এলাকার মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

অন্ধ হাফেজ আব্দুল মান্নানের এক প্রতিবেশি বলেন, আমি তাকে ৫৫ থেকে ৬০ বছর ধরে চিনি। আমাদের এলাকায় যে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান হয় সেখানে তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। দাওয়াতে এলে খুশি হয়ে তাকে যা দেওয়া হয় তিনি তাই নিয়ে বাড়িতে চলে যান। আমার এলাকার কিছু শিশুদের ফ্রিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা দেন তিনি।

অন্য একজন বলেন, হাফেজ আব্দুল মান্নান তিনি একজন খুবই সহজ সরল মানুষ। টাকা পয়সা ছাড়াই তিনি বাচ্চাদের মাঝে কোরআন দীক্ষা দিয়ে থাকেন। এটি আসলেই অনেক মহৎ কাজ। তার পরিবারের আয়ের পথ বলতে কোনো কিছু নেই, তারপরেও মানুষ তাকে হাদিয়া হিসেবে যতটুকু দেন তিনি ততটুকু নিয়ে খুশি থাকেন।

মৌকরন কাজিবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম  বলেন, আমার পরিচিত হাফেজ আব্দুল মান্নান উনি একজন ভালো মানুষ। আল্লাহর পবিত্র কোরআন তিনি শিক্ষা দেন। সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো যে কোরআন নিজে শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেওয়া। আর তিনি সেটা করছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি।

হাফেজ আব্দুল মান্নান ১৯৬৮ সালে পটুয়াখালী ডোনাভান হোসানিয়া মাদরাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। সেই হিসাবে তার হাফেজ হওয়ার বয়স ৫৫ বছর।

হাফেজ আব্দুল মান্নান বলেন, আমি ছেলেমেয়েদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ফ্রিতে কোরআন পড়াই। কোরআন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে আমি কোনো টাকা পয়সা চেয়ে নেই না। আমি ইসলামের খেদমতের জন্য এই কাজটা করে থাকি। আমি শত শত মানুষকে ফ্রিতে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর ইচ্ছায় এলাকার অনেক মানুষকে আমি কোরআন শরীফ পড়াতে সক্ষম হয়েছি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.