জীবনের প্রায় শেষ বয়সেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান হাসিনা খাতুন (৫১)। ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া হয়নি হাসিনা খাতুনের। অভোবের সংসারে হাসিনা খাতুনের লেখা-পড়া বেশিদুর আগায়নি বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। সংসারের বেড়াজালে আটকে যায় জীবন। হাসিনার সংসারে স্বামী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের হাসিনা খাতুন (৫১)। নিজে লেখাপড়া না জানলেও ছেলেকে বানিয়েছেন গ্র্যাজুয়েট।
হাসিনা খাতুন এখন ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ৫ম শ্রেণিতে মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল ২৭। বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিনই স্কুলে আসেন হাসিনা খাতুন। লেখাপড়ায়ও খুব মনোযোগী তিনি। তার সঙ্গে পড়া সহপাঠীরাও খুব খুশি তাকে পেয়ে।
হাসিনা বেগম জানান, তার ইচ্ছে ছিল পড়লেখা করার। এই বয়সে চাকরি কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি লেখাপড়া করতে চান তা নয়। জ্ঞানার্জন করাই তার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সময়-সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না হাসিনা খাতুনের। পাশের বাড়ির এক পুত্রবধূর কাছে পরামর্শ করে ভর্তি হয়ে যান প্রাইমারি স্কুলে। লেখাপড়া করার ইচ্ছা দেখে শিক্ষকরা ভর্তি করে নেন তাকে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এক শিক্ষার্থী জানান, প্রথম শ্রেণি থেকেই তাদের সঙ্গে হাসিনা দাদি পড়েন। একসঙ্গে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করছে সে।
ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা বেগম বলেন, এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। তার আগ্রহের ফলে তাকে ভর্তি নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, সংসার সামলে নিয়মিত স্কুলে আসেন তিনি। শিক্ষকরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যারা লিখতে ও পড়তে পারেন না তারা হাসিনা খাতুনের মতো স্কুলে আসলে দেশ নিরক্ষরমুক্ত হবে।