৪৫ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে বুধবার (২২ নভেম্বর) ৪৫ বছরে পদার্পণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে ১৭৫ একরের এই বিদ্যাপীঠ।
তথ্য মতে, দেশের উচ্চশিক্ষার প্রসারে তৎকালীন সরকার ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা দুলালপুর নামক জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এছাড়া ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০ (৩৭) পাস হয়। এরপর ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে ৮টি অনুষদ ও ৩৬টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়া ৪০৮ জন শিক্ষক, ৫০৪ জন কর্মকর্তা, ১০৭ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৪ জন সাধারণ কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে রয়েছে ১০ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতে আটটি আবাসিক হল (৫টি ছাত্র হল ও ৩টি ছাত্রী হল) রয়েছে। আবাসন সুবিধায় আরও দুটি ১০তলা হলের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হল, একটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য একটি, কর্মচারীদের জন্য একটি, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় ব্লগ এবং নতুন প্রশাসন ভবন। দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট অনেকাংশে লাঘব হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৫৯৯ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৫৮ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ২৫০ জন পিএইচ.ডি এবং ৯৫ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। পরিবহন পুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য রয়েছে ৪৯ টি গাড়ি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে ইর্ষণীয় সাফল্য।
শিক্ষা, গবেষণা, স্কলারশিপ থেকে শুরু করে সংস্কৃতি চর্চায় দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছিলেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২জন শিক্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। প্রধান ফটক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। সেখানে দাঁড়িয়ে ডানে তাকালেই দেখা মেলবে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’। আর বাঁয়ে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ‘সততা ফোয়ারা’। পাশেই রয়েছে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে তৈরি ক্যাম্পাস ভিত্তিক বৃহৎ শহীদ মিনার এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘স্মৃতিসৌধ’। ক্যাম্পাস রয়েছে বিস্তৃত সবুজে ঘেরা ‘ডায়না চত্বর’ যা ক্যাম্পাসের প্রাণ। যেখানে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় সব সময় মুখরিত থাকে। রয়েছে ঝাল চত্তর, বটতলা যেখানে শিক্ষার্থীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র, ব্যয়ামাগার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে রয়েছে হাতিরঝিল খ্যাত মনোরম বিশ্ববিদ্যালয় লেক।
এদিকে ৪৫ বছর পদার্পণে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। সন্ধ্যা হলেই লাল-নীল রঙের দ্যুতিতে মন কাড়ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কেউ সেলফি তুলতে কেউবা গল্প আড্ডায় ব্যস্ত সময় পার করছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অন্যরকম এক অনুভূতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় আলোকসজ্জা করেছি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঁকা হয়েছে আল্পনা। নতুন রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মূল লক্ষ্য দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় আনা। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ”স্টুডেন্টস-ই পেমেন্ট” সিস্টেম উদ্বোধন করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। শিক্ষা, গবেষণা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে দেশের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে ইতোমধ্যে অনন্য উচ্চতায় আসন করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমরা আশাবাদী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শিক্ষাখাতে বাংলাদেশ অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এটাই প্রত্যাশা করি। এছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে ”স্টুডেন্টস-ই পেমেন্ট” সিস্টেম উদ্বোধন করা হবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে অসামান্য অবদান রাখবে।”